কেরাণীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার, ঈদের দিন |
যেখানে সাধারণত নিরবতা আর অনুশোচনার আবরণে ঢাকা থাকে চারদিক, সেখানেই ঈদের এক উজ্জ্বল দুপুরে সৃষ্টি হলো অনন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত। কারাবন্দি গায়ক মাঈনুল আহসান নোবেল ঈদ উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বন্দিদের সামনে গেয়ে তুললেন জনপ্রিয় গান।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দিদের জন্য এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় ঈদের বিশেষ দিনে, শনিবার (৩১ মে) বিকাল সাড়ে ৩টায়। কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক (উন্নয়ন) মো. জান্নাত-উল ফরহাদ জানান, "বন্দিরা আনন্দময় পরিবেশে এই অনুষ্ঠানটি উপভোগ করেছে।"
নোবেলকে দেখা যায় মঞ্চে বসে হাতে গিটার নিয়ে গাইতে—‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে’ কিংবা ‘ভেবে দেখেছ কী’–গানের সুরে তখন মুখরিত হয় কারাগারের গারদপাশ। অন্যান্য বন্দিরাও যেন ভুলে যান দেয়ালের গণ্ডি—তারা গলা মেলান, করতালিতে ফেটে পড়েন, কারাগারে তৈরি হয় এক মুহূর্তের মুক্ত আবেগ।
এই আয়োজন শুধুমাত্র সাংস্কৃতিক আনন্দেই সীমাবদ্ধ ছিল না। দিনটি শুরু হয় একধরনের আত্মিক ও সামাজিক বন্ধনে। সকাল ৭টায় কারাগারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। এরপর সকাল সোয়া ৮টায় বন্দিদের জন্য জামাত এবং সকাল ১০টায় দ্বিতীয় জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
কারা কর্তৃপক্ষ দিনটিকে উৎসবমুখর করে তুলতে ছিল সদা সচেষ্ট। আগত দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানো হয় লিচু, শরবত দিয়ে; আর শিশুদের জন্য ছিল ক্যান্ডি, চিপস ও ললিপপ। যেন এক ফালি খুশি প্রতিটি অতিথির মনে ছুঁয়ে যায়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার সুরাইয়া আক্তার জানান, “ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে আমরা বন্দিদের জন্য ৮টি গরু ও ১০টি খাসি জবাই করেছি। এসব মাংস দিয়ে বিশেষ খাবার রান্না করে বন্দি ও কর্মীদের পরিবেশন করা হয়।”
খাবারের তালিকাও ছিল চমকপ্রদ। সকালের নাস্তায় ছিল পায়েস ও মুড়ি, দুপুরে মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংস, কোমল পানীয়, সালাদ, পান সুপারি ও মিষ্টান্ন। যেন বন্দিরাও এক মুহূর্তের জন্য হলেও ভুলে যান বন্দিত্বের গ্লানি।
জেলার এ কে এম মাসুদ বলেন, “এছাড়াও দুস্থ বন্দিদের জন্য ঈদ উপলক্ষে বিতরণ করা হয়েছে ৬০০টি লুঙ্গি ও ৮৫০টি টি-শার্ট। আমরা চেয়েছি, ঈদের দিনটা তাদের জন্যও একটু স্বস্তির হোক।”
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল মাঈনুল আহসান নোবেলের পরিবেশনা। গত ১৯ মে রাতে ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি। এরপর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন। কারাবন্দি অবস্থায়ও তার কণ্ঠ যে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, তারই এক জীবন্ত উদাহরণ ছিল এই আয়োজন।
নোবেল হয়তো এখন গারদের ভিতর, কিন্তু তার গান এই ঈদে ছিল মুক্ত। বন্দিদের হৃদয়ে সৃষ্টি করেছে এক অন্যরকম উচ্ছ্বাস—যা কোনো শেকলেই বেঁধে রাখা সম্ভব নয়।
		
				
			


















