মানবিকতা নয়, এবার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি—ফিলিস্তিনের পাশে মাল্টা
ফিলিস্তিনিদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলা নিপীড়ন, বোমাবর্ষণ ও মানবিক সংকট বিশ্ব বিবেককে নড়বড়ে করে তুললেও, কার্যকর রাষ্ট্রীয় পদক্ষেপ ছিল খুবই সীমিত। তবে সেই নিরবতা ভাঙছে ইউরোপের একটি ছোট, শান্তিপ্রিয় দেশ—মাল্টা। জুন মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে দেশটি।
রোববার (২৬ মে) মাল্টার প্রধানমন্ত্রী রবার্ট অ্যাবেলা এক রাজনৈতিক সমাবেশে এই ঘোষণা দেন। সমাবেশে তিনি স্থানীয় রাজনীতি থেকে শুরু করে বৈশ্বিক সংকট নিয়েও কথা বলেন। গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতি তুলে ধরেন অত্যন্ত আবেগপ্রবণ ভাষায়।
‘৫৪ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত, চোখ বন্ধ রাখার সময় নয়’
প্রধানমন্ত্রী অ্যাবেলা বলেন, “এই মানবিক ট্র্যাজেডির দিকে আর চোখ বন্ধ করে থাকতে পারি না। প্রতিদিনই গাজায় মানুষ মরছে। এখন পর্যন্ত ৫৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন—যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। এটা শুধু মানবিক দুর্যোগ নয়, এটি একটি সভ্যতা-বিরোধী বর্বরতা।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে চলেছি। এটা কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। আগামী ২০ জুন একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পর এই স্বীকৃতি বাস্তবায়িত হবে।”
ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯ শিশুর স্মৃতিতে কাঁদলেন অ্যাবেলা
প্রধানমন্ত্রী রবার্ট অ্যাবেলা তার ভাষণে বিশেষভাবে উল্লেখ করেন দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে সম্প্রতি সংঘটিত এক হৃদয়বিদারক ঘটনার কথা। ইসরায়েলি বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন একজন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. আলা আল-নাজ্জারের নয়টি সন্তান।
তিনি বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এই ঘটনায় গভীরভাবে মর্মাহত। একজন চিকিৎসক, একজন মা—তার নয়টি সন্তান একসাথে নিহত হয়েছে। তার স্বামী গুরুতর আহত। আর একমাত্র জীবিত সন্তান—সে আজ মা, বাবা, ভাইবোন সবার শোকে ভেঙে পড়েছে। কী নির্মম এই বাস্তবতা!”
মাল্টার দরজা খোলা ডা. আলা আল-নাজ্জার ও তার পরিবারের জন্য
মানবতার প্রতি সম্মান জানিয়ে মাল্টার প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেন, “আমরা ডা. আলা আল-নাজ্জার ও তার পরিবারকে মাল্টায় স্বাগত জানাতে প্রস্তুত। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্বে মানবিকতা এখনো বেঁচে আছে, এবং আমাদের ভূমিকা সেটা রক্ষা করা।”
ফিলিস্তিনের স্বপ্ন পূরণে এক নতুন পদক্ষেপ
বিশ্বে যেসব দেশ এখনো ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি, তাদের উদ্দেশেও মাল্টার এই ঘোষণা একটি শক্তিশালী বার্তা। শুধু রাজনৈতিক সমর্থন নয়, ফিলিস্তিনিদের অস্তিত্বকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে মাল্টা দেখিয়ে দিচ্ছে—বিবেক এখনও মরে যায়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই স্বীকৃতি ভবিষ্যতে অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলোকেও ফিলিস্তিনের পাশে দাঁড়াতে উৎসাহিত করতে পারে। এর মাধ্যমে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে।
গাজার রক্তাক্ত মাটি, ধ্বংসস্তূপে হারিয়ে যাওয়া ভবিষ্যৎ, আর মা-বাবাহারা শিশুর কান্না—সবই হয়তো কিছু দেশের কাছে কেবল ‘সংবাদ’। কিন্তু মাল্টার মতো কিছু দেশ এই বেদনার প্রতিধ্বনি শুনতে পেয়েছে। তারা এগিয়ে এসেছে ন্যায় ও নৈতিকতার পক্ষ নিতে।
২০ জুনের সেই ঘোষণা শুধু ফিলিস্তিনের জন্য নয়, এটি মানবতার পক্ষেও এক ঐতিহাসিক দিন হয়ে থাকবে।