ঢাকা, জুন ২০২৫:
আসন্ন জুলাই মাসটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ একটি সময়। অতীতে এই সময়ে বহু গণআন্দোলন ও ছাত্র আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, যা সমাজে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এনেছিল। কিন্তু আজ যখন এই স্মৃতিকে ঘিরে বিভিন্ন আলোচনা ও সভার আয়োজন চলছে, সাধারণ মানুষের মনে একটাই প্রশ্ন জাগছে—“এই স্মৃতির শহরে, আমাদের কথা ভাবছে কে?”
দেশজুড়ে ছাত্রসমাজ নতুন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের উদ্যোগে ব্যস্ত। রাজনৈতিক দলগুলোও জড়িয়ে আছে ক্ষমতার পালাবদলের কৌশলে। একে অপরকে দোষারোপের মাধ্যমে বিরোধিতা ও জবাবদিহির রাজনীতি চলছে। কিন্তু এই দ্বন্দ্বের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে সাধারণ জনগণের স্বপ্ন ও আকাঙ্ক্ষা।
জনগণ চেয়েছিল ন্যায্যতা, ন্যূনতম নিরাপত্তা, সুশাসন ও উন্নয়ন। তারা চেয়েছিল এমন এক রাষ্ট্র যেখানে কাজের সুযোগ থাকবে, ন্যায্য দামে জিনিসপত্র পাওয়া যাবে, চিকিৎসা ও শিক্ষাসেবা সহজলভ্য হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, এখনও হাসপাতালের বেড নেই, বেকার যুবকের সংখ্যা বাড়ছে, বাজারে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীন, আর দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র।
একজন ভ্যানচালক কষ্টের সাথে বললেন, "জুলাইতে আন্দোলন হয়েছিল জনগণের পক্ষে। এখন কারা আছে আমাদের পক্ষে? নতুন ছাত্র দল তৈরি হচ্ছে, ভালো কথা। কিন্তু তারা কি জানে, আমাদের ঘরে চাল নেই?"
বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমানে সংস্কার কিংবা উন্নয়ন বিষয়ক পরিকল্পনাগুলো কেবল কথার মধ্যে সীমাবদ্ধ। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নেই দীর্ঘমেয়াদী উদ্যোগ। ছাত্ররা যেভাবে নতুন সংগঠন তৈরি করছে, তা একদিকে সম্ভাবনার জন্ম দিচ্ছে, কিন্তু সেই সম্ভাবনা কতটা বাস্তবসম্মত, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে।
একজন শিক্ষক বললেন, "জুলাই মানেই সংগ্রাম, আত্মত্যাগ আর আদর্শের প্রতিচ্ছবি। কিন্তু আজ তা কেবল আনুষ্ঠানিকতায় রয়ে গেছে। আদর্শের চর্চা কমে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের কথা উঠে আসছে না রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্মে।"
এছাড়াও শহর-গ্রামজুড়ে দেখা যাচ্ছে উন্নয়নের অসম চিত্র। যেখানে একদিকে মেগা প্রকল্প উদ্বোধন হচ্ছে, অন্যদিকে একটি গ্রামের মানুষ চিকিৎসার অভাবে পথেই মারা যাচ্ছে।
উপসংহার:
জুলাই কেবল অতীত স্মরণ করার সময় নয়, নতুন করে প্রশ্ন তোলার সময়—এই রাষ্ট্রের প্রকৃত মালিক, অর্থাৎ সাধারণ জনগণ, তারা কোথায়? তাদের দাবিদাওয়া, তাদের স্বপ্ন, তাদের মৌলিক চাহিদা কতটা গুরুত্ব পাচ্ছে?
আশা করা যায়, রাজনৈতিক দলগুলো ও নতুন প্রজন্মের ছাত্র নেতৃত্ব এই প্রশ্নের জবাব খুঁজবে—না হলে 'জুলাই' শুধুই স্মৃতির গর্ভে হারিয়ে যাবে, আর জনগণের হতাশা হয়ে উঠবে চিরস্থায়ী।