close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

জুলাই শহীদ স্বীকৃতি পাচ্ছেন রোহিঙ্গা যুবক

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
রোহিঙ্গা কিশোর নূর মোস্তফা পেলেন ‘জুলাই শহীদ’ স্বীকৃতি। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে প্রাণদানকারী এই সাহসী যুবকের ইতিহাস গড়লো এক নতুন দৃষ্টান্ত।..

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো একজন রোহিঙ্গা যুবককে ‘জুলাই শহীদ’ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার। ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী গণ-আন্দোলনে শহীদ হওয়া নূর মোস্তফা নামের ১৭ বছর বয়সী এক কিশোর এবার রাষ্ট্রীয়ভাবে বরণ করতে যাচ্ছে নতুন এক পরিচয়ে—একজন বীর শহীদ হিসেবে।

সরকারের তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক পোস্টে গত বুধবার বিকেলে জানানো হয়, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নূর মোস্তফার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে ‘জুলাই শহীদ’ স্বীকৃতির জন্য। এই প্রস্তাব ইতোমধ্যে ২২ জুনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন প্রেসসচিব শফিকুল আলম, যিনি নিজেও উপদেষ্টার পোস্টটি শেয়ার করেন। তিনি জানান, গণ-অভ্যুত্থান অধিদপ্তরের মাধ্যমে স্বীকৃতির প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী জুলাই মাসেই এটি ঘোষিত হবে।

নূর মোস্তফা ছিলেন একজন রোহিঙ্গা কিশোর, জন্ম নিয়েছিলেন বাংলাদেশেই, তবে তার পরিবার এসেছিল মিয়ানমার থেকে। তার বাবা শফিউল আলম ১৯৯২ সালে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন এবং স্থায়ীভাবে কক্সবাজারের ঈদগাঁও এলাকায় বসবাস শুরু করেন।

নূর মোস্তফা স্থানীয় দারুস সালাম দাখিল মাদরাসার দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। বয়স মাত্র ১৭ বছর হলেও তিনি সরাসরি জড়িয়ে পড়েছিলেন ২০২৪ সালের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে। ইতিহাসের পাতা বদলে দেওয়া সেই সকাল ছিল ৫ আগস্ট।

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সকাল। জায়গা—কক্সবাজারের ঈদগাঁও থানা চত্বর। সেখানে তখন উত্তাল চলছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন। অন্যান্য সাধারণ মানুষের মতোই আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন নূর মোস্তফা। তখনও কেউ জানত না, এই কিশোরই হতে যাচ্ছে দেশের ইতিহাসে প্রথম রোহিঙ্গা শহীদ

দুপুর নাগাদ পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়। সেই সংঘর্ষেই গুলিবিদ্ধ হন নূর মোস্তফা। তাঁকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়, তবে ৬ আগস্ট দুপুরে তাঁর মৃত্যু হয়।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ে পুরো কক্সবাজার জেলায়, পরে তা দেশজুড়ে আলোড়ন তোলে। সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তোলে—“একজন রোহিঙ্গা যদি দেশের গণতন্ত্রের জন্য প্রাণ দিতে পারেন, তবে তার জায়গা কি রাষ্ট্রের বুকে হওয়া উচিত নয়?”

এই প্রশ্নই আজ বাস্তব রূপ নিচ্ছে। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে গৃহীত এই সিদ্ধান্ত যে শুধু নূর মোস্তফাকে নয়, বরং শরণার্থী জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের মূলধারার অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সাহসিক পদক্ষেপ—তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

একজন রাষ্ট্রহীন কিশোর আজ রাষ্ট্রীয়ভাবে ‘শহীদ’—এই ঘোষণা একদিকে যেমন ইতিহাস তৈরি করছে, অন্যদিকে দেখাচ্ছে মানবিকতা, সমানাধিকার ও আত্মত্যাগের সত্যিকারের মূল্যায়ন।

এই স্বীকৃতি শুধু নূর মোস্তফার জন্য নয়, বরং এটি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জন্য সম্মান, সম্মানিত হওয়ার আশ্বাস। যারা নিজেদের দেশ হারিয়ে পথে পথে ঘুরছে, তাদের একজন সন্তান আজ বাংলাদেশের জাতীয় আত্মত্যাগের ইতিহাসে স্থায়ী স্থান পেতে যাচ্ছে

कोई टिप्पणी नहीं मिली