৯ জুলাইয়ের ছাত্র গণ-অভ্যুত্থানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠছে ‘জুলাই জাদুঘর’। শুধু স্মৃতিচারণ নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি শিক্ষা ও চেতনার কেন্দ্র হিসেবেই এই জাদুঘরকে প্রতিষ্ঠা করতে চায় সরকার। শনিবার (৩১ মে) বিকাল ৪টায় কক্সবাজারের পেকুয়ায় শহীদ ওয়াসিম আকরামের বাড়িতে গিয়ে এমনই ঘোষণা দিয়েছেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তাফা সরোয়ার ফারুকী।
ওয়াসিম আকরাম, যিনি গত বছরের ১৬ জুলাই চট্টগ্রামের ষোলশহরে এক ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন, সেই বেদনার স্মৃতি এখনও তার পরিবার ও এলাকাবাসী বয়ে বেড়াচ্ছেন। উপদেষ্টা ফারুকী শহীদ ওয়াসিমের বাড়িতে গেলে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরিবার তার মৃত্যুর পর ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও আজও শোকে ভেঙে পড়া অবস্থায় রয়েছেন।
ফারুকী বলেন, “জুলাই বিপ্লব শুধুই বীরত্বের গল্প নয়, এটি ভয়াবহ বেদনার ইতিহাসও। ওয়াসিমের বাবার কান্নার ভেতরে যেমন এক রকম গল্প আছে, তেমনি আরও হাজারো পরিবারের আছে আলাদা বেদনার ইতিহাস। আমরা সেইসব স্মৃতি ধরে রাখতে চাই। জুলাই জাদুঘরের মধ্য দিয়ে এই ইতিহাস সবার কাছে তুলে ধরা হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা চাই, আগামী ৫০ বছর পরেও কেউ যেন ভুলে না যায়—কি হয়েছিল সেই দিনগুলোতে। যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম বুঝতে পারে কী করা উচিত, কী নয়। এই জাদুঘর হবে তাদের জন্য শিক্ষা, চেতনা ও মূল্যবোধের প্রতীক।”
স্মারক সংগ্রহে পেকুয়ায় উপদেষ্টা, সংগ্রহ করলেন শহীদ ওয়াসিমের ব্যবহৃত জিনিসপত্র
জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে স্মারক সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সংস্কৃতি উপদেষ্টা দেশজুড়ে শহীদদের বাড়িতে যাচ্ছেন। তারই অংশ হিসেবে তিনি শনিবার পেকুয়ার উত্তর মেহেরনামা গ্রামে ওয়াসিমের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে তিনি শহীদের ব্যবহৃত একটি টি-শার্ট ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত সামগ্রী সংগ্রহ করেন। এটি জাদুঘরের জন্য একটি স্মরণীয় সংগ্রহ হিসেবে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান তিনি।
আর্থিক সহায়তা পেলেন আহত আন্দোলনকারীরা
ওই দিনই পেকুয়া উপজেলা মিলনায়তনে জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত আন্দোলনকারীদের মধ্যে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে মোট ৫ লাখ টাকার চেক তুলে দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। উপস্থিত ছিলেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মফিদুর রহমান, পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মঈনুল হোসেন চৌধুরী, এবং উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নুর পেয়ারা বেগম।
সভায় বক্তারা বলেন, ইতিহাসকে ভুলে গেলে জাতির পথ হারানোর আশঙ্কা থাকে। তাই জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখতে এমন জাদুঘর সময়ের দাবি। এটি শুধু স্মরণ নয়, বরং রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার একটি বহিঃপ্রকাশ।