ভারতের আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে করা মামলার প্রভাব শুধু ব্যবসায়িক অঙ্গনেই নয়, বরং এর প্রভাব ভারতের বৈশ্বিক "সফট পাওয়ার" ও নীতিনির্ধারণের ওপরেও পড়ছে। ২০ নভেম্বর নিউইয়র্কের প্রসিকিউটরদের দায়ের করা মামলায় আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ঘুষ এবং বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ আনা হয়। এই মামলাটি শুধু আদানি গ্রুপের সাম্রাজ্যকেই নয়, বরং ভারতের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিকেও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে।
মামলার মূল অভিযোগ এবং প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া
মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে যে, আদানি গ্রুপ সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্পের চুক্তি পেতে ভারতীয় কর্মকর্তাদের $২৬৫ মিলিয়ন ঘুষ দিয়েছে এবং এ নিয়ে ওয়াল স্ট্রিটে মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করেছে। আদানি গ্রুপ এই অভিযোগকে ভিত্তিহীন দাবি করে আইনি পথে মোকাবিলা করার ঘোষণা দেয়।
তবে এই মামলার রেশ সঙ্গে সঙ্গে পড়েছে আদানি গ্রুপের বৈশ্বিক ব্যবসা এবং ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে। কেনিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপের বড় কর্পোরেশনগুলো আদানি গ্রুপের সঙ্গে তাদের চুক্তি পুনর্বিবেচনা করছে।
আন্তর্জাতিক প্রভাব: কেনিয়া এবং অন্যান্য দেশ
কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো মামলার খবর পাওয়ার পরপরই আদানির সঙ্গে বিমানবন্দর ও বিদ্যুৎ প্রকল্পে করা বড় চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার ঘোষণা দেন। একইসঙ্গে, ইউরোপের টোটালএনার্জিস কোম্পানি আদানির নতুন প্রকল্পে বিনিয়োগ বন্ধ রাখার কথা জানায়।
শ্রীলঙ্কার নতুন সরকারও আদানির সঙ্গে বিদ্যমান প্রকল্পগুলো পুনর্মূল্যায়নের কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশেও আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুক্তি নিয়ে নতুন সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে।
ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি
ভারতের অভ্যন্তরেও বিরোধীরা আদানির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত দাবি করছে। বিরোধী দলগুলো সংসদে আদানি ইস্যু নিয়ে প্রশ্ন তুললে কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়ে।
মোদির সরকার ও আদানি: গভীর সম্পর্কের প্রশ্ন
গৌতম আদানি এবং নরেন্দ্র মোদির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে অনেকদিন ধরেই আলোচনা চলছে। মোদি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় থেকেই আদানির বড় বড় প্রকল্পে সমর্থন প্রদান করে আসছেন। আদানির ব্যবসায়িক সফলতায় মোদির সরকারের ভূমিকা "সফট পাওয়ার" এবং বৈশ্বিক অবকাঠামো উন্নয়নে ভারতের অবস্থান শক্তিশালী করেছে।
তবে বিজেপি মুখপাত্ররা এই মামলাকে "ভারতের ওপর আক্রমণ" হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ককে উত্তপ্ত করে তুলছে।
বিশ্বব্যাপী আদানি গ্রুপের ভবিষ্যৎ
বর্তমানে আদানি গ্রুপের বৈদেশিক অর্থায়নের উৎস সংকুচিত হচ্ছে। মার্কিন বিশ্লেষকদের রিপোর্টের প্রভাব তাদের অংশীদারদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে। এশিয়া ও আফ্রিকার দেশগুলো আদানির সঙ্গে তাদের আগের চুক্তিগুলো থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
গৌতম আদানি এক বক্তব্যে বলেছেন, "প্রতিটি আঘাত আমাদের আরও শক্তিশালী করে তোলে।" তবে আদানি গ্রুপের ক্রমাগত সংকট মোকাবিলার জন্য আইনি চ্যালেঞ্জ এবং বৈশ্বিক অংশীদারিত্বের পুনর্নির্মাণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
Inga kommentarer hittades



















