close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

যুক্তরাষ্ট্রে আইসিই হেফাজতে এক কানাডিয়ান নাগরিকের মৃত্যু..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ফ্লোরিডার ডিটেনশন সেন্টারে কানাডিয়ান নাগরিক জনি নভিয়েলোর রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে তোলপাড়। মানবাধিকার প্রশ্নে উদ্বেগে কানাডা, তদন্তে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র।..

যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (ICE)-এর হেফাজতে কানাডিয়ান নাগরিক জনি নভিয়েলোর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কূটনৈতিক টানাপোড়েন সৃষ্টি করেছে। ৪৯ বছর বয়সী জনি নভিয়েলোকে আমেরিকা থেকে কানাডায় ডিপোর্ট করার প্রস্তুতির সময় তিনি হঠাৎ মৃত্যুবরণ করেন। তার এই মৃত্যু নিয়ে শুরু হয়েছে জোরালো তদন্ত এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ।

ICE জানিয়েছে, জনি গত ২৩ জুন ২০২৫-এ তাদের হেফাজতেই মারা যান। তবে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট কারণ এখনো জানানো হয়নি। বিষয়টি তদন্তাধীন থাকলেও, একাধিক মানবাধিকার সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক মহল এরইমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

জনির আইনজীবী ড্যান লেইসিং জানান, তিনি ছিলেন অত্যন্ত নিরীহ, শান্ত ও নম্র স্বভাবের মানুষ। পেশাগতভাবে তিনি সাধারণত ক্যাশিয়ার এবং ক্লিনিংয়ের কাজ করতেন। কোনো সহিংস আচরণ বা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে তাঁর জড়িত থাকার প্রমাণ ছিল না বলেও জানান লেইসিং।

তবে ২০২৩ সালে জনির বিরুদ্ধে মাদক সংক্রান্ত একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত করে তাকে ৩৬৪ দিনের সাজা দেওয়া হয়েছিল। যদিও তিনি সেই সাজা পুরোপুরি স্টেট প্রিজনে কাটাননি — বরং কিছুদিন কাউন্টি জেলে থেকে প্যারোলে মুক্ত হন। আইনজীবীর দাবি, তিনি কোনো প্যারোল ভঙ্গ করেননি। তবুও চলতি বছরের মে মাসে ICE তাকে হঠাৎ গ্রেফতার করে।

জনির মৃত্যুকে ঘিরে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন উঠেছে তার চিকিৎসা নিয়ে। পরিবারের অভিযোগ, তিনি মৃগীর রোগে ভুগছিলেন এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ পাচ্ছিলেন না। ডিটেনশনের সময় তার সঙ্গে পরিবারের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরিবার পরে আইনজীবীর মাধ্যমে খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করলেও বিষয়টি অনিশ্চিত থেকে যায়।

আইনজীবী লেইসিং বলেন, “আমি নিশ্চিত না, সে সঠিক ওষুধ পেয়েছিল কি না। তবে পরিবার অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল।”

কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অনিতা আনন্দ বলেন, “আমাদের কনস্যুলার টিম নভিয়েলোর ডিটেনশনের খবর পাওয়ার পরপরই তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরা মৃত্যুর কারণ জানার জন্য তথ্য সংগ্রহ করছি এবং তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।”

যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত কানাডার রাষ্ট্রদূত পিট হোকস্ট্রাও নিশ্চিত করেছেন, তারা তদন্তের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করছেন এবং এর ফলাফল কানাডা সরকারকে জানানো হবে।

এই মৃত্যুর ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটল, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন তার অভিবাসন নীতিতে কঠোরতা এনেছে। প্রতিদিন গড়ে ৩,০০০ অভিবাসীকে আটক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ICE-কে। আইন বিশেষজ্ঞ রিচার্ড কারল্যান্ড বলেন, “নভিয়েলোর মতো অপরাধমূলক রেকর্ড থাকা ব্যক্তিদের ট্রাম্প প্রশাসনের ‘প্রাধান্য ভিত্তিক বহিষ্কার’ তালিকায় রাখা হয়েছে। কিন্তু এভাবে গণহারে ডিটেনশন মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা জানিয়েছে, আমেরিকায় এখনও একাধিক কানাডিয়ান নাগরিক অভিবাসন সংশ্লিষ্ট কারণে আটক রয়েছেন। এর মধ্যে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার বাসিন্দা জাসমিন মুনিকে কাজের ভিসা নবায়নের সময় ICE আটক করেছিল। মিডিয়ার চাপের ফলে তাকে দ্রুত মুক্তি দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞদের মত, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি আলাদা চুক্তি বা প্রটোকল থাকা দরকার — যা শুধুমাত্র কানাডিয়ান নাগরিকদের ডিটেনশনে স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা এবং যোগাযোগের সুবিধা নিশ্চিত করবে।

এছাড়াও, এই মৃত্যু কানাডিয়ানদের আমেরিকা সফরে নিরুৎসাহিত করতে পারে। যদিও কানাডার নাগরিকরা সাধারণত ভিসা ছাড়াই আমেরিকায় ৬ মাস পর্যন্ত থাকতে পারেন, তবে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে এখন অনেকেই আমেরিকা ভ্রমণ এড়িয়ে চলছেন।

২০২৪ সালে কানাডার প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ নাগরিক আমেরিকা সফর করেছিলেন, তবে ২০২৫ সালের প্রথমার্ধেই শত শত ফ্লাইট যাত্রীর অভাবে বাতিল হয়েছে। যা আমেরিকা-কানাডা সম্পর্কেও অর্থনৈতিক চাপ তৈরি করতে পারে।

জনি নভিয়েলোর মৃত্যু শুধু একটি ব্যক্তির মর্মান্তিক পরিণতি নয় — বরং এটি উত্তর আমেরিকার অভিবাসন নীতি, মানবাধিকার, এবং দ্বিপাক্ষিক কূটনীতির জটিল বাস্তবতার প্রতিচ্ছবি। এই ঘটনার ফলাফল দুই দেশের সম্পর্কের ভবিষ্যৎকেও প্রভাবিত করতে পারে। এখন অপেক্ষা কেবল একটাই: প্রকৃত সত্যটা প্রকাশ্যে আসে কিনা । 

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator