ইংল্যান্ডের ঐতিহ্যবাহী চেস্টার সিটির ৮০০ বছরের বেশি পুরোনো ইতিহাসে এবারই প্রথম একজন হিজাবধারী বাংলাদেশি মুসলিম নারী লর্ড মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার কৃতি সন্তান শিরিন আক্তার এই বিরল সম্মানে ভূষিত হয়ে শুধু ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিকে নয়, পুরো বাংলাদেশকেই গর্বিত করেছেন।
২০২৫ সালের ২৩ মে শুক্রবার সন্ধ্যায় এক অনাড়ম্বর অথচ তাৎপর্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে চেস্টার সিটি হল ভবনে শিরিন আক্তার আনুষ্ঠানিকভাবে লর্ড মেয়র হিসেবে শপথ নেন। সেদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সিটি কাউন্সিলের সদস্যরা, স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা ও বিভিন্ন কমিউনিটির প্রতিনিধিরা। পরনে ছিল তাঁর পরিচ্ছন্ন পোশাক ও মাথায় হিজাব — যার মধ্য দিয়ে তিনি তাঁর সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকে সম্মান জানিয়ে নেতৃত্বের মঞ্চে আরোহণ করেন।
শিরিন আক্তারের শিকড় সিলেট জেলার বিশ্বনাথ উপজেলার উত্তর ধর্মদা গ্রামে। তার পিতা শাহ হুশিয়ার উল্ল্যা ও মাতা পারভীন আক্তার — দুজনই একসময় যুক্তরাজ্যে অভিবাসী হয়ে আসেন এবং পরবর্তীতে চেস্টারে স্থায়ী হন। শিরিন তাদের দ্বিতীয় সন্তান।
রাজনীতিতে তার অভিষেক ঘটে ২০২৩ সালের সরকার নির্বাচনে, যেখানে তিনি লেবার পার্টির টিকিটে ‘চেস্টার সিটির আপটন’ ওয়ার্ড থেকে কাউন্সিলর হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। ওই জয়ই ছিল চেস্টার সিটির ইতিহাসে প্রথম বাংলাদেশি মুসলিম নারী কাউন্সিলর হিসেবে তার আত্মপ্রকাশ।
এই বিজয়ের ঠিক এক বছর পর, তার নেতৃত্ব ও জনপ্রিয়তার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে ডেপুটি লর্ড মেয়র মনোনীত করা হয়। আর ২০২৫ সালের মে মাসে, দীর্ঘ ইতিহাস ও রাজনৈতিক ধারাবাহিকতার মধ্য দিয়ে তিনি নির্বাচিত হলেন চেস্টার সিটির পূর্ণ লর্ড মেয়র।
এই নির্বাচন শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক অর্জন নয়, বরং বহুসাংস্কৃতিক যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক মঞ্চে মুসলিম নারী নেতৃত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এটি প্রমাণ করে, জাতিগত ও ধর্মীয় পরিচয় কোনো বাধা নয় — যোগ্যতা ও নিষ্ঠাই মূল শক্তি।
নবনির্বাচিত লর্ড মেয়র শিরিন আক্তার বলেন,
"চেস্টার সিটির ইতিহাসে আমি প্রথম বাংলাদেশি ও মুসলিম নারী হিসেবে লর্ড মেয়র নির্বাচিত হয়েছি, যা আমার জন্য গর্বের ও আনন্দের। আমি দোয়া চাই, যেন দায়িত্বের প্রতি বিশ্বস্ত থেকে চেস্টারবাসীর সেবা করতে পারি এবং কমিউনিটির সকল মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারি।"
তিনি আরো বলেন, তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা ও সামাজিক কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি মূলধারার রাজনীতিতে আসেন এবং শুরু থেকেই চেস্টার সিটি কাউন্সিলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।
শিরিন আক্তারের এই অর্জন নিঃসন্দেহে যুক্তরাজ্যে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশি, বিশেষ করে নারীদের জন্য এক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে। ভবিষ্যতে আরো বাংলাদেশি মেয়ে যেন এই পথ অনুসরণ করে সাফল্য অর্জন করে, সেই প্রত্যাশাও উঠে এসেছে বিভিন্ন কমিউনিটি নেতার কণ্ঠে।
চেস্টারের ইতিহাসে এই নতুন অধ্যায়ের সূচনার সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাজ্যে বাঙালি কমিউনিটির মর্যাদা ও পরিচিতি এক ধাপ আরও ওপরে উঠে গেল — যার মূল কারিগর হয়ে থাকলেন শিরিন আক্তার।