যুদ্ধের অবসানে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি জেলেনস্কি! ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাতে নতুন মোড়?
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ গড়িয়ে তৃতীয় বছরে পড়েছে। প্রাণহানি ও বিপুল ক্ষয়ক্ষতির এই যুদ্ধ অবসানের জন্য এবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি। ব্রিটিশ সাংবাদিক পিয়েরস মরগ্যানকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেন।
জেলেনস্কি জানান, এ পর্যন্ত ইউক্রেনের ৪৫ হাজার ১০০ সেনা নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৯০ হাজার। একইসঙ্গে তিনি দাবি করেন, রাশিয়ার নিহত সেনার সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার, আর আহত হয়েছে ৭ লাখ। তবে যুদ্ধ বন্ধের জন্য শুধু পুতিনের সঙ্গে আলোচনা যথেষ্ট নয়, এতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোকেও সম্পৃক্ত হতে হবে বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।
যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ইউক্রেনের হতাশা
জেলেনস্কি বলেন, “তিন বছর ধরে চলা এই যুদ্ধে অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ অপরিসীম। আমরা আর মৃত্যুর মিছিল দেখতে চাই না। যদি পুতিনের সঙ্গে বসলে যুদ্ধ বন্ধ করা সম্ভব হয়, আমি আলোচনায় বসতে রাজি আছি।”
তবে তিনি স্পষ্ট জানান, রাশিয়া দখল করা ইউক্রেনের অঞ্চলগুলো কোনোভাবেই ছেড়ে দেবে না এবং এই বিষয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর অবস্থান হতাশাজনক। তিনি বলেন, “আমরা যতটা সমর্থন আশা করেছিলাম, পশ্চিমারা তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।”
পুতিন কি আলোচনায় রাজি?
জেলেনস্কির এই আগ্রহের বিপরীতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের মনোভাব একেবারেই ভিন্ন। পুতিন আগেই জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি জেলেনস্কির সঙ্গে আলোচনায় বসবেন না। অর্থাৎ, যুদ্ধ অবসানে এখনো কোনো সুস্পষ্ট কূটনৈতিক পথ খুলে যায়নি।
ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে জেলেনস্কির প্রতিক্রিয়া
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রচারে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় ফিরলেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটাবেন। এছাড়া তিনি ঘোষণা করেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে আর কোনো সামরিক সহায়তা দেবে না এবং রাশিয়ার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে।
তবে বাস্তবে এখনো পর্যন্ত ট্রাম্প এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেননি। জেলেনস্কি বলেন, “ট্রাম্পের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত আলোচনা চলছে এবং খুব শিগগিরই আনুষ্ঠানিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।”
যুদ্ধ কি শেষ হবে?
পুতিন ও জেলেনস্কির কঠোর অবস্থান, পশ্চিমাদের দ্বিধাগ্রস্ত মনোভাব এবং রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অবস্থান—এসব মিলে এই মুহূর্তে যুদ্ধের অবসান সহজ মনে হচ্ছে না। যদিও জেলেনস্কি আলোচনার জন্য প্রস্তুত, তবে রাশিয়ার অনড় অবস্থানের কারণে কূটনৈতিক সমাধানের সম্ভাবনা এখনো অনিশ্চিত।
বিশ্ববাসীর দৃষ্টি এখন ইউক্রেন-রাশিয়ার ভবিষ্যৎ কৌশলের দিকে। এই যুদ্ধ কি নতুন মোড় নেবে, নাকি দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত হয়ে বিশ্ব রাজনীতির অংশ হয়ে থাকবে? সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।
No comments found



















