মধ্যপ্রাচ্যে রণহুঙ্কার! ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব দিতে একেবারে বজ্রাঘাতের মতো আঘাত হানল তেহরান। সোমবার রাতে কাতার ও ইরাকে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর দিকে মিসাইল ছুঁড়েছে ইরান। তাসনিম নিউজ এজেন্সি নিশ্চিত করেছে, ‘বিশারাত ফাতেহ’ ও ‘ইয়া আবা আব্দুল্লাহ’ কোডনামে শুরু হওয়া এই হামলা ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক অভিযানগুলোর একটি।
ইরানের ইসলামী বিপ্লবী গার্ড কোর (IRGC) সরাসরি জানায়, কাতারের আল উদেইদ বিমানঘাঁটি ও ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ছয়টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে। এই আল উদেইদ ঘাঁটিতেই অবস্থান করছে প্রায় ১০,০০০ মার্কিন সেনা। ইরানের দাবি, তাদের হামলা কাতারের বিরুদ্ধে নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের জবাব।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হামলার তীব্র নিন্দা জানালেও জানায়, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ইরানের মিসাইল হামলা সফলভাবে প্রতিহত করেছে। তারপরও দেশটি এই আক্রমণকে ‘সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক লঙ্ঘন’ বলে অভিহিত করেছে এবং প্রত্যুত্তরের অধিকার সংরক্ষণ করার হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
ইরানের হামলার প্রতিক্রিয়ায় মধ্যপ্রাচ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ উত্তেজনা। কুয়েত ও বাহরাইন সাময়িকভাবে আকাশসীমা বন্ধ করে দিয়েছে। বাহরাইন সরকারের তরফে বলা হয়েছে, দেশজুড়ে সাইরেন বাজিয়ে জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। সিরিয়ার কাসরাক ঘাঁটিকে রাখা হয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতায়।
ঢাকা-দোহা রুটে ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। বিভিন্ন এয়ারলাইন্স মধ্যপ্রাচ্যগামী বিমান চলাচলে সতর্কতা অবলম্বন করছে। হরমুজ প্রণালি হয়ে দুইটি সুপারট্যাংকার আচমকা ফিরে যাওয়ায় তেলের পরিবহনে নতুন করে সংকট দেখা দিয়েছে।
হোয়াইট হাউসে ট্রাম্প প্রশাসন জরুরি বৈঠকে বসেছে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী ইরানকে ‘অভূতপূর্ব শক্তি’ দিয়ে জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ইসরায়েলের বিদ্যুৎ বিভাগ জানায়, ইরানের হামলায় তাদের দক্ষিণাঞ্চলে ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে লোকজন দীর্ঘসময় আটকে ছিলেন।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি রাশিয়ায় গিয়ে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বলেন, ‘ইরানের বিরুদ্ধে এই আগ্রাসনের কোনো ভিত্তি নেই।’ রুশ প্রেসিডেন্ট জানান, রাশিয়া ইরানকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত এবং তারা ইতিহাসের সঠিক পাশে রয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইসরায়েল হয়তো নিজেই ঘোষণা দিতে পারে যুদ্ধের লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। আবার যুক্তরাষ্ট্রও উভয় পক্ষকে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত বলে ঘোষণা দিতে পারে। কিন্তু ইরান এখনই থামতে নারাজ – তারা বলছে, আমেরিকার আগ্রাসনের প্রতিটা জবাব দিতে তারা প্রস্তুত।
‘কোসউইজডম লেক’ ও ‘সাউথ লয়্যালটি’ নামে দুটি সুপারট্যাংকার রুট বদল করে ফিরে গেছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হরমুজ প্রণালির ওপর নির্ভরতা কমাতে যাচ্ছে আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানিগুলো। পারস্য উপসাগরের প্রবেশদ্বার হরমুজ নিয়ে ইরান বহুবার হুমকি দিয়েছে, এবার সেই হুমকি বাস্তবে রূপ নিচ্ছে।
ইরান-যুক্তরাষ্ট্র দ্বন্দ্ব এখন মধ্যপ্রাচ্যের প্রতিটি মাটি, আকাশ ও সমুদ্রপথে গড়াচ্ছে ভয়াবহ যুদ্ধের দিকে। কাতার, ইরাক, সিরিয়া, বাহরাইনসহ গোটা অঞ্চল এখন এক তপ্ত বারুদের স্তূপ। আগামী ঘন্টাগুলোতে যুদ্ধ থামবে না, বরং কীভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা যায় – সেটাই এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।