ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে আরও এক ধাপ উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে। এবার সে উত্তেজনার কেন্দ্রে আসছে তুরস্ক। দেশটি ইঙ্গিত দিয়েছে, প্রয়োজন হলে সরাসরি প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে সীমান্ত ও আকাশপথে। এমন এক সময়, যখন ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলায় ইরানে প্রাণ গেছে শত শত মানুষের—বিশেষ করে দেশটির শীর্ষ সামরিক ও পারমাণবিক নেতৃত্ব প্রায় ধ্বংসের মুখে।
আলজাজিরার একটি লাইভ আপডেটে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) জানানো হয়েছে, ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ অব্যাহত থাকায় আঙ্কারা তার সীমান্ত রক্ষার পাশাপাশি যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেছে। বিশেষ করে তুরস্ক-ইরান সীমান্তে নজিরবিহীন কড়া নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ইরান থেকে তুরস্কে কোনো অনিয়মিত অভিবাসনের প্রমাণ মেলেনি।
এখানেই শেষ নয়—তুরস্ক প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দেশটি এখন ঘরোয়া প্রযুক্তি দিয়ে তৈরি করছে একটি সমন্বিত বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। মূলত আকাশপথে আক্রমণের আশঙ্কায় এই ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে, যা ভবিষ্যতের বড় ধরনের সংঘাতের পূর্বাভাস দিতে পারে।
ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ অভিযানের পরপরই তুরস্কে দ্রুত মোতায়েন করা হয় কুইক রিঅ্যাকশন অ্যালার্ট বিমান। সীমান্তে নিয়মিত টহল দিচ্ছে যুদ্ধবিমানগুলো, যাতে করে কোনো ইসরায়েলি বিমান তুরস্কের আকাশসীমা লঙ্ঘন করতে না পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, তুরস্কের এই কৌশল কেবল সীমান্ত প্রতিরক্ষা নয়, বরং এটা একটি রাজনৈতিক বার্তাও। আঙ্কারা স্পষ্টভাবে বোঝাচ্ছে—যুদ্ধের ধোঁয়া যদি তার দিকেও আসে, তবে জবাব দেওয়া হবে সমানভাবে।
গত ১২ জুন মধ্যরাতে ইরানের রাজধানী তেহরানসহ একাধিক স্থানে ভয়াবহ হামলা চালায় ইসরায়েল। 'অপারেশন রাইজিং লায়ন' নামে পরিচিত এই অভিযানে ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক অবকাঠামোকে লক্ষ্যবস্তু বানানো হয়।
হামলায় নিহত হন ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, আইআরজিসি প্রধান হোসেইন সালামি, খাতাম আল-আনবিয়া সদর দপ্তরের কমান্ডার গোলাম আলি রশিদ এবং ছয়জন শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানীসহ বহু কর্মকর্তা। এই হামলা ইরানের ইতিহাসে অন্যতম ‘সর্বোচ্চ ক্ষতিসাধনকারী’ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এই ধ্বংসযজ্ঞের জবাব দিতে ইরান পাল্টা অভিযান শুরু করে। ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’ নামের এই পাল্টা হামলায় ব্যবহার করা হয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, যা ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা পদ্ধতিকে ভেদ করে আঘাত হানে।
যদিও হতাহতের সংখ্যা কম, তবুও ইসরায়েলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ক্ষয়ক্ষতি হয়। আতঙ্কে তেলআবিব, হাইফা, বিয়েরশেবা শহরের হাজার হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নেয়।
তুরস্কের এমন প্রস্তুতি কেবল সীমান্ত নিরাপত্তার জন্য নয়, বরং এই সংঘর্ষ যদি আরও বিস্তৃত আকার নেয়, সেই সম্ভাবনার প্রতিক্রিয়াও। বিশেষ করে যদি যুক্তরাষ্ট্র কিংবা আরব মিত্ররা সরাসরি জড়ায়, তবে আঞ্চলিক এক মহাযুদ্ধে রূপ নিতে পারে বিষয়টি।
তুরস্ক, যার অবস্থান মধ্যপ্রাচ্যের কেন্দ্রস্থলে, এবং যার ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব অনেক বেশি—সে যদি সরাসরি সংঘর্ষে জড়ায়, তাহলে যুদ্ধ কেবল ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না।
ইসরায়েল ও ইরানের চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি এমন এক দ্বন্দ্বে পরিণত হয়েছে, যার প্রভাব এখন ছড়িয়ে পড়ছে আশেপাশের দেশগুলোতেও। আর এ পরিস্থিতিতে তুরস্কের অবস্থান স্পষ্ট—যুদ্ধ যদি তার দিকেও ধেয়ে আসে, আঙ্কারাও প্রস্তুত জবাব দিতে।