এক সময়ের প্রত্যাশা আর আশার প্রতীক ছিলেন তিনি। কিন্তু সময়ের স্রোতে সেই আশা এখন কেবল হতাশার ভারে ঝুঁকে পড়েছে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে নিজের তীব্র হতাশা প্রকাশ করেছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া।
বুধবার সন্ধ্যায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি বিস্তারিত স্ট্যাটাসে তিনি বলেন—তিনি আর দেশের কাছে কোনো আশা রাখেন না। সেই সঙ্গে জানান, ‘শুধু সরকার নয়, যতই আন্দোলন বা পরিবর্তন হোক, এই দেশের মানুষই বদলাবে না।
ফারিয়া স্ট্যাটাসে বলেন, “শীতের সকালে একজন ইমাম আর একজন চোরের গল্পে যেমন ইমাম ভাবে চোর নামাজ পড়তে এসেছে আর চোর ভাবে ইমাম দেখতে ভালো কিন্তু সুযোগ পেলেই চুরি করবে—আমরাও তাই। নিজের মতো চিন্তা করে অন্যদের বিচার করি।
তিনি জানান, এখনো এমন অনেক মানুষ আছেন যারা মূল্যবোধ নিয়ে বাঁচেন। টাকার কাছে সবাই নৈতিকতা বিক্রি করে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে—এই সমাজ সেই মানুষদের বাঁচতে দেয় না।
জুলাই ২০২৩-এর ছাত্র আন্দোলনের সময়কার প্রসঙ্গ টেনে ফারিয়া জানান, তখন তাকে এবং আরও কিছু সেলিব্রিটিকে সরকারের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছিল মেট্রোরেল কিংবা বিটিভিতে আগুন দেওয়ার ঘটনার প্রতিবাদে ভিডিও বানাতে।
“আমি সরাসরি না বলতে পারিনি, সাহস হয়নি। তখন বলেছিলাম সময় লাগবে। কিন্তু পরে সিয়াম ভাইয়ের ‘না’ শুনে আমিও না বলি,”—বলেন তিনি।
তার এই অবস্থান তখন গোপনই রেখেছিলেন। কারণ, রাজনৈতিক উচ্চারণে কোনো উদ্দেশ্য ছিল না। এখন যখন অনলাইনে তাকে নিয়ে ‘ডলার খাওয়া’ টাইপ কল্পকাহিনী ছড়ানো হয়, তখন তার হাসি ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না।
শবনম ফারিয়া বলেন, “আমি জানি এমন অনেক মানুষ যারা আওয়ামী লীগকে মন থেকে ভালোবাসে, কিন্তু সেসময় প্রতিবাদে সামিল হয়েছিল। কারণ, তখনকার পরিস্থিতি কাউকে নাড়া না দিয়ে পারেনি। রাজনৈতিক মতাদর্শ যাই হোক না কেন, কেউ একজন মানুষ হিসেবে সেই হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে চুপ থাকতে পারেনি।
তার ভাষ্য, বাংলাদেশে সরকার যত বদলাক, পুরনো সংস্কৃতি বদলায় না। “জাতি হিসেবে আমরা খুবই বেহায়া। আমরা ভালো হব না। যতই নোবেল পাওয়া মানুষ আসুক, সরকার পাল্টাক, কেউ চুরি বা দুর্নীতি আটকাতে পারবে না।
এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এই দেশের শিশু-কিশোর-বৃদ্ধ—যেই ক্ষমতা পাবে, সেই তা অপব্যবহার করবে। আমার আর কোনো প্রত্যাশা নেই।”
ফারিয়ার হতাশা এখানেই শেষ নয়। নিজের শেষ মন্তব্যে কৌতুকের ভঙ্গিতেও জানান, ‘সত্যি বলতে, যদি ডলার পেতাম তবে মন্দ হতো না। শ্রীলঙ্কা যাওয়ার আগে মাত্র ২০০ ডলার পাসপোর্টে এন্ডোর্স করতে ২৫ হাজার ৩০০ টাকা খরচ করতে গিয়ে খুব কষ্ট হয়েছিল।
এই স্ট্যাটাস শুধু একজন তারকার ব্যক্তিগত মত নয়, বরং এটি প্রতিফলন একটি শ্রেণির বুদ্ধিজীবী ও সচেতন নাগরিকের মনোভাবের। যেখানে সরকার, দল, সিস্টেম বদলালেও মানুষের নৈতিকতা বদলায় না—এই উপলব্ধি সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয়।