যশোরের ছাতিয়ানতলা এলাকায় শনিবার সকালে ঘটেছে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা। দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন এক পুলিশ সদস্যসহ দুই তরুণ। আহত হয়েছেন আরও একজন, যিনি বর্তমানে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করছেন।
নিহত পুলিশ সদস্যের নাম ফজলুল হক (২৮)। তিনি খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের আটন্ডা ফাঁড়িতে কর্মরত ছিলেন। তার বাড়ি ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার ক্ষুদ্র রয়রা গ্রামে। অপর নিহত তরুণের নাম রিয়াল হোসেন (২৮), যিনি ঝিনাইদহের কাশীপুর এলাকার ইমানউদ্দিনের ছেলে।
এই দুঃখজনক ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) নূর-ই-আলম সিদ্দিকী।
প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, শনিবার সকাল ছয়টার দিকে কনস্টেবল ফজলুল হক একাই মোটরসাইকেলে করে ব্যক্তিগত প্রয়োজনে ঝিনাইদহের দিকে যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই বিপরীত দিক থেকে আসছিল একটি মোটরসাইকেলে চড়ে মামুন ও রিয়াল। ছাতিয়ানতলা এলাকায় পৌঁছালে দুইটি মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়।
দুর্ঘটনার তীব্রতায় তিনজনই ছিটকে পড়ে যান এবং গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাৎক্ষণিকভাবে ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। আহতদের দ্রুত যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
হাসপাতালে নেওয়ার পর দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. শাকিরুল ইসলাম কনস্টেবল ফজলুল হককে মৃত ঘোষণা করেন। অন্যদিকে, গুরুতর আহত রিয়াল ও মামুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় তাদের খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।
কিন্তু খুলনায় নেওয়ার পথেই মৃত্যুর কাছে হার মানেন রিয়াল হোসেন। তার মৃত্যুতে কাশীপুর এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পরিবারের সদস্যরা এখনও মেনে নিতে পারছেন না এই অকাল মৃত্যু।
সমাজে প্রতিক্রিয়া ও পুলিশ প্রশাসনের শোক
যশোর ও ঝিনাইদহের সাধারণ মানুষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এ দুর্ঘটনা নিয়ে ব্যাপক শোকের ছায়া নেমে এসেছে। একজন তরুণ পুলিশ সদস্যের এমনভাবে চলে যাওয়া সহকর্মীদের হৃদয় বিদীর্ণ করেছে।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) থেকে জানানো হয়েছে, কনস্টেবল ফজলুল হক দায়িত্ববান ও সৎ অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার মৃত্যুতে পুলিশ বাহিনী একজন প্রতিশ্রুতিশীল সদস্যকে হারালো।
সড়কে মৃত্যুর মিছিল: প্রশ্ন থেকে যায়
একটি সাধারণ সকালে, মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ভুল সিদ্ধান্ত বা অসতর্কতা কেড়ে নিল দুটি তাজা প্রাণ। বছরজুড়ে এমন অসংখ্য দুর্ঘটনায় দেশের সড়কগুলো হয়ে উঠছে মৃত্যুর ফাঁদ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মোটরসাইকেল চালানোর সময় নিয়ম না মানা, অতিরিক্ত গতি, ও হেলমেট ব্যবহার না করাই এ ধরনের দুর্ঘটনার মূল কারণ।
সরকারি এবং বেসরকারি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি, কঠোর ট্রাফিক আইন প্রয়োগ এবং আধুনিক সড়ক ব্যবস্থাপনার দাবি উঠেছে পুনরায়।
শেষ কথা
এই দুর্ঘটনা শুধু দুইটি পরিবারের নয়, পুরো সমাজের জন্যই এক ট্র্যাজেডি। জীবনের গতি যতই দ্রুত হোক, সড়কে সচেতনতা ও নিরাপত্তা যেন কোনোভাবেই বিস্মৃত না হয়। এক মুহূর্তের অসতর্কতায় জীবন থেমে যেতে পারে চিরতরে।



















