close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

যন্ত্রণা সইতে না পেরে ছেলেকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলেন মা, ৬ দিন পর লা শ উদ্ধা র..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মাত্র ১৫ বছরের একটি নিষ্পাপ প্রাণ, জন্মগত প্রতিবন্ধী — আর সেই সন্তানের মৃত্যুর কারণ হয়ে উঠলেন তারই মা! মাদারীপুরে মায়ের হাতে নদীতে নিক্ষিপ্ত হওয়া নাসিরের দেহ উদ্ধার হলো ৬ দিন পর। এই মর্মান্তিক ঘটনায় স..

এক মর্মস্পর্শী ও বেদনাদায়ক ঘটনার পরিসমাপ্তি ঘটলো আড়িয়াল খাঁ নদ থেকে ১৫ বছরের প্রতিবন্ধী কিশোর নাসির উদ্দিনের মরদেহ উদ্ধারের মধ্য দিয়ে। এই নিষ্পাপ শিশুটিকে নদীতে ছুঁড়ে ফেলেছিলেন তার নিজেরই মা রিজিয়া বেগম, কারণ হিসেবে বলেছিলেন—“আর সহ্য হচ্ছিল না”।

ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ এপ্রিল। মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের বাঁচামারা গ্রামের রিজিয়া বেগম তার ছেলে নাসিরকে নিয়ে যান নদীর পাড়ে। নাসির, যিনি জন্মগতভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে প্রতিবন্ধী ছিলেন, প্রতিদিনকার ভোগান্তি ও যন্ত্রণা একসময় মায়ের সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যায়।

ঘটনার দিন রিজিয়া ছেলেকে নিয়ে যান স্থানীয় একটি সেতুতে। সেখান থেকে ঠেলে ফেলে দেন সন্তানকে নদীতে। স্থানীয়রা চিৎকার করে উঠলেও ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে। কেউ কেউ ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে জানায়। দত্তপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক ইমরান শিল্পীর নেতৃত্বে পুলিশ এসে অভিযুক্ত রিজিয়াকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। মায়ের মুখে উঠে আসে ভয়ংকর স্বীকারোক্তি—“ওর অসহ্য কান্না, খিঁচুনি, দিনরাতের অশান্তি আমাকে মানসিকভাবে ভেঙে দিয়েছে। আমি পেরিনি আর!”

লাশ উদ্ধারের বিবরণঃ

৬ দিন পর, ৬ মে মঙ্গলবার বিকাল ৩টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের বলাইচর এলাকায় স্থানীয়রা নদীতে অর্ধগলিত এক যুবকের মরদেহ দেখতে পান। সঙ্গে সঙ্গে খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। সদর থানার ওসি মো. আদিল হোসেন জানান, মরদেহটি উদ্ধার করে মাদারীপুর সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় ডিএনএ নমুনা এবং পরিবারের মাধ্যমে। নিশ্চিত হওয়া যায়—এটাই সেই নিখোঁজ নাসির উদ্দিন।

নাসিরের বাড়ি শিবচর উপজেলার বন্দরখোলা ইউনিয়নের কাচারীকান্দি গ্রামে। তার বাবা আজগর হাওলাদার অনেক আগেই মারা যান। মা-ই ছিলেন একমাত্র অভিভাবক। দারিদ্র্য, সন্তানকে চিকিৎসার ব্যয়, আর প্রতিবন্ধী সন্তানের প্রতি সমাজের অবহেলা—সবমিলিয়ে রিজিয়ার জীবন রূপ নিয়েছিল বিষাদে।

মানবিক প্রশ্ন ও সামাজিক প্রতিক্রিয়াঃ

এই নির্মম ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় নেমে আসে শোকের ছায়া। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন—একজন মা কীভাবে এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? আবার কেউ কেউ বলছেন, সমাজ ও সরকার যদি প্রতিবন্ধীদের জন্য সহায়ক ব্যবস্থা নিতো, হয়তো এমন ঘটনা ঘটতো না।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাসিরের ছবি ও ঘটনার বর্ণনা ছড়িয়ে পড়লে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অনেকে রিজিয়া বেগমের শাস্তির দাবিতে সরব হয়েছেন, আবার কেউ কেউ তার মানসিক চিকিৎসার দাবিও করেছেন।

পুলিশের অবস্থানঃ

ওসি মো. আদিল হোসেন জানান, “ঘটনার পর আমরা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তকে আটক করেছি এবং স্বীকারোক্তি নিয়েছি। এখন মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে আইনি প্রক্রিয়া আরও এগিয়ে যাবে।”

শেষ কথা:

এটা কি শুধুই একজন মায়ের অপরাধ? নাকি সমাজ ও রাষ্ট্রের এক ব্যর্থতার করুণ চিত্র? এই প্রশ্ন রেখে যায় মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ নদ। এমন আর যেন না ঘটে—এই হোক আমাদের প্রত্যয়।

Ingen kommentarer fundet