close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

জন্মদিনের শুভেচ্ছা লিওনেল আন্দ্রেস মেসি

Mehedi Hasan avatar   
Mehedi Hasan
শুরুতেই একটা প্রশ্ন—সত্যিই কি কোনো মানুষকে ঈশ্বরের পর্যায়ে তোলা যায়?

আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরের এক কুয়াশাঘেরা সকাল ছিল সেদিন। ২৪ জুন, ১৯৮৭। দিনের শুরুতে কেউ জানতো না, বিশ্ব ফুটবলের ভাগ্যই বদলে দিতে এসেছে এক শিশু। কিন্তু আজ—এই নামটা যেন শ্বাসের মতো: লিওনেল আন্দ্রেস মেসি।

সেদিনটা পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষের কাছে হয়তো স্রেফ আরেকটা দিন ছিল। কিন্তু ফুটবলভক্তদের কাছে—এটা আশীর্বাদের দিন। কারণ ওই একটামাত্র মানুষ, যাকে দেখে প্রতিটি মানুষ হেসেছে, কেঁদেছে, আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শিখেছে।

মেসির জীবনটা শুরু হয় খুব সাধারণভাবে। বাবা হোর্হে ছিলেন ফ্যাক্টরির কর্মী, মা সেলিয়া পরিচ্ছন্নতা কর্মী। এমনই এক পরিবারের ছোট্ট ছেলে যখন পাড়ার গলিতে বল নিয়ে দৌড়াতো, তখন কেউ কল্পনাও করেনি—এই ছেলেটাই একদিন বলটা নিয়ে আমাদের হৃদয় চুরি করবে।

১১ বছর বয়সে ধরা পড়ে গ্রোথ হরমোনের ঘাটতি। বয়স অনুযায়ী শরীর বাড়ছিল না। চিকিৎসা ব্যয় তো স্বপ্নের বাইরে। এমন কঠিন সময়েই যেন স্বপ্নটা একবার মরে যেতে বসেছিল। কিন্তু মেসি হার মানার ছেলে না। পরিবার যখন বার্সেলোনার হাত ধরে স্পেনে পাড়ি জমালো, তখনও কেউ নিশ্চিত ছিল না যে এই গল্প একদিন কিংবদন্তি হয়ে উঠবে।

বার্সার সেই সাদা টিস্যুতে চুক্তি—শুধু একটা ক্লাব নয়, একটা জীবন বদলে দিয়েছিল। এরপর? ইতিহাসের শুরু।

ড্রিবলিং, পাসিং, গোল, দৃষ্টি—মেসির পায়ে শুধু বল না, ছিল যেন শিল্প। ৭৭৮ ম্যাচে ৬৭২ গোল, ৩৫টি ট্রফি, ৮টা ব্যালন ডি’অর—সংখ্যাগুলো বড়, কিন্তু অনুভব তার চেয়েও অনেক বড়।

মেসিকে নিয়ে গল্প বললে বার্সেলোনার কথা না বললেই নয়। গার্দিওলার 'ফলস নাইন' পরীক্ষা, এমএসএন ত্রয়ী, কিংবা সেই একা হাতে ম্যাচ জেতানোর মুহূর্তগুলো—সব জায়গায় একটা জিনিস একই ছিল: মেসির শান্ত অথচ আগুন জ্বালানো উপস্থিতি।

তবে ফুটবলের এই দেবদূতের সবচেয়ে আবেগঘন অধ্যায়টা সম্ভবত জাতীয় দলের হয়ে খেলা। কতবার না কান্না দেখা গেছে তার চোখে—২০০৭, ২০১৫, ২০১৬ কোপা আমেরিকা; ২০১৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল। মনে আছে সেই ম্লান মুখ? সেই নিঃশব্দ চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, “আমি কি পারি না?” অভিমানে একবার তো জাতীয় দল থেকেও অবসর নিয়েছিলেন। 

কিন্তু হ্যাঁ, সে পেরেছে। ২০২১ কোপা আমেরিকা, তারপর ২০২২ বিশ্বকাপ—সব প্রশ্নের জবাব দিয়ে গেছে একে একে। এমবাপ্পের হ্যাটট্রিকও থামাতে পারেনি মেসির গল্প। সেটা ছিল সিনেমার শেষ দৃশ্য, যেখানে নায়ক সব হারিয়েও সব জিতে নেয়।

তারপরো কেউ কেউ ভাবে—মেসি কি শুধু মাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? না, তার বাইরে সে আরও বড় কিছু। নম্রতা, নিরহংকার আচরণ, পরিবার-ভক্ত-শিশুদের প্রতি ভালোবাসা—সব মিলিয়ে মেসি যেন মানুষ হবার সংজ্ঞাটাকেই নতুন করে লিখে দিয়েছে।

তার ‘Leo Messi Foundation’ আজও অসংখ্য শিশুদের জন্য আশ্রয়ের নাম। আর পারিবারিক জীবনে স্ত্রী আন্তোনেলা আর তিন সন্তান যেন তার সবচেয়ে বড় শক্তি।

অনেকেই বলেছিল, পিএসজিতে গিয়ে মেসি হারিয়ে যাবে। আবার কেউ বলেছিল, মায়ামিতে গিয়ে থেমে যাবে। কিন্তু মেসি থামে না। সে নিজের মতো করে এগোয়। আর সেই পথেই সে ছড়িয়ে দেয় আলো।

আজও হয়তো মাঠে নেমে মেসি আগের মতোই দৌড়ান না। কিন্তু বিশ্বাস করুন, যখন বলটা তার পায়ে আসে, তখন প্রতিটি ভক্তের হৃদয়টা বলে উঠে—“চুপ করো, মেসি খেলছে।”

আর হয়তো বেশি দিন খেলবেন না, সেটাও জানি। কিন্তু মেসির গল্প থাকবে। শিশুরা পড়বে, তরুণেরা অনুসরণ করবে, বাবারা ছেলেকে বলবে, “দেখো, খেলা কিভাবে জীবন শেখায়।”

জন্মদিনের বিশেষ শুভেচ্ছা লিও! 

לא נמצאו הערות