সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ | ৫ এপ্রিল, শনিবার সন্ধ্যা
একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার মতো স্বাভাবিক প্রশাসনিক কাজে এবার দেখা গেল ঘুষের এক নতুন ‘সংস্করণ’। মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান থানায় এক যুবক তার পাসপোর্ট হারানোর ঘটনায় জিডি করতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সেখানে তাকে দিতে হলো তিন প্যাকেট বেনসন সিগারেটের দাম! অভিযুক্ত পুলিশের নাম এএসআই মাহফুজুর রহমান।
ভুক্তভোগী মো. সালমান কবীর নামের ওই যুবক জানান, শনিবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে তিনি থানায় উপস্থিত হন। উদ্দেশ্য—পাসপোর্ট হারানোর সাধারণ ডায়েরি করা। সালমান বলেন, “আমি ঢাকা পল্টন থেকে বাসে করে বাড়ি ফিরছিলাম, পথে আমার পাসপোর্ট হারিয়ে যায়। বিষয়টি জানাতে থানায় গেলে এএসআই মাহফুজুর রহমান প্রথমে বলেন, পাসপোর্ট ঢাকায় হারিয়েছে, তাই জিডি পল্টন থানায় করতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “আমি তাকে অনুরোধ করি, কারণ আমি এখন সিরাজদিখানে আছি, এখানে জিডি না করলে পাসপোর্ট তোলার প্রক্রিয়া ঝুলে যাবে। তখন তিনি বলেন—তিন প্যাকেট বেনসন নিয়ে আসেন, না হলে টাকা দিয়ে যান। বাধ্য হয়ে থানার পেছনের দোকানে গিয়ে ১,২০০ টাকা দিয়ে সিগারেটের দাম দিই।”
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলেছেন—জনসেবার বদলে কী পুলিশ এখন সিগারেট ব্যবসায়ী হয়ে গেছে?
ঘটনার সত্যতা যাচাইয়ে যখন অভিযুক্ত এএসআই মাহফুজুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়, তিনি ফোনে বিষয়টি ‘বোঝেননি’ বলে এড়িয়ে যান। একাধিকবার প্রশ্ন করা হলেও সরাসরি উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।
এ ব্যাপারে সিরাজদিখান সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আ ন ম ইমরান খান বলেন, “থানায় কোনো কাজের জন্য টাকা লাগে না। এমন ঘটনা ঘটলে অবশ্যই তা অনৈতিক এবং দায়িত্বজ্ঞানহীন।”
তিনি আরও বলেন, “আমি বর্তমানে ছুটিতে আছি। তবে বিষয়টি যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় থানার স্বচ্ছতা ও পুলিশি কর্মকাণ্ড নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে। নাগরিকদের অভিযোগ—যেখানে মানুষের ন্যায়বিচার পাওয়ার আশ্রয়স্থল হওয়া উচিত ছিল, সেই থানায় যদি সিগারেট দিয়ে কাজ করতে হয়, তবে সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
একটি সাধারণ জিডি করতে গিয়ে যদি ঘুষের বদলে দিতে হয় তিন প্যাকেট সিগারেটের দাম, তাহলে এটিকে কি ‘প্রথা’ বলা যায়? নাকি এটি প্রশাসনিক অব্যবস্থাপনার আরেকটি করুণ দৃষ্টান্ত? পুলিশের মতো দায়িত্বশীল বাহিনীর সদস্যরা যদি এমন আচরণ করেন, তবে জনসেবার ভবিষ্যৎ সত্যিই প্রশ্নবিদ্ধ।