২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর থেকে দেশের রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন শুরু হয়েছে। সেই পরিবর্তনের ঢেউ সরাসরি আঘাত হেনেছে জাতীয় পার্টির ওপর। একসময়ের আলোচিত দলটি এখন কার্যত রাজনীতির পরিসর থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
অভ্যুত্থানের পর থেকেই জাতীয় পার্টিকে মাঠে তেমন কোনো কার্যক্রমে দেখা যায়নি। কর্মসূচি ঘোষণা করলেও তা ছাত্র-জনতার প্রবল প্রতিরোধে থমকে গেছে। দলটির শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হওয়ায় রাজনৈতিকভাবে তারা আরও কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।
দলটির এই অবস্থানের পেছনে অতীতের রাজনৈতিক ভূমিকা অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল জাতীয় পার্টি। এরপর ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালের ব্যাপকভাবে বিতর্কিত নির্বাচনে দলটি তথাকথিত বিরোধী দলের আসনে থেকেও আওয়ামী লীগ সরকারের অংশীদার হিসেবে কাজ করেছে।
জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ হলো—আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েমে দলটি নিরবচ্ছিন্নভাবে সহযোগিতা করেছে। এর ফলেই ৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের পর ছাত্র-জনতার কাছে জাতীয় পার্টি ‘স্বৈরাচার-সহযোগী’ হিসেবে চিহ্নিত হয় এবং দলটি রাজপথ থেকে অনেকটাই গুটিয়ে যায়।
এ অবস্থায় জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং অন্যান্য শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। বিশেষ করে গণ অধিকার পরিষদ, এনসিপি, ছাত্র-জনতা এবং একাধিক জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক শক্তি প্রকাশ্যে এই দাবি তুলেছে।
রবিবার এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্পষ্ট বার্তা দেন। তিনি লেখেন:
“হে ইন্টারিম সরকার, জি এম কাদেরের ব্যাপারে আপনাদের সিদ্ধান্ত কী? পরে কিন্তু ছাত্র-জনতার প্রতিরোধকে ‘মব’ বলে চালিয়ে দেবেন না।”
এই পোস্টের পর রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয় নতুন করে বিতর্ক। অনেকেই মনে করছেন, সরকারের নীরবতা এই মুহূর্তে বিভ্রান্তিকর। ছাত্র-জনতা, যারা এক সময় রাজপথে স্বৈরাচারবিরোধী শক্তির কেন্দ্রবিন্দু ছিল, তারা এখন নতুন প্রশ্ন ছুড়ছে—জি এম কাদেরের মতো বিতর্কিত নেতাদের বিষয়ে সরকার কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি ইন্টারিম সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে দ্রুত ও স্পষ্ট কোনো বার্তা না আসে, তাহলে ছাত্র-জনতার মধ্যে আস্থা হ্রাস পাবে এবং রাজপথে আবার উত্তেজনা বাড়তে পারে।
জাতীয় পার্টির ভবিষ্যত এখন স্পষ্টভাবে অনিশ্চয়তার মুখে। দলটির রাজনৈতিক ভাগ্য নির্ভর করছে সরকার কী পদক্ষেপ নেয় তার ওপর। তবে জনমনে প্রশ্ন স্পষ্ট: "স্বৈরাচারের উত্তরাধিকারী দলগুলোর প্রতি নীরবতা কেন?"



















