close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

জয়ের স্বপ্ন নিয়ে অজানা এক সকালের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
চতুর্থ দিন শেষে গল টেস্টে জমজমাট লড়াই—বাংলাদেশ ১৮৭ রানে এগিয়ে, হাতে ৭ উইকেট। নাজমুল–মুশফিকের দৃঢ়তায় জয়ের স্বপ্ন আরও কাছাকাছি। শেষ দিনে অপেক্ষা শুধু ইতিহাস গড়ার!..

গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের আকাশে যেমন সূর্য ডুবে গেছে, তেমনি রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় ঢেকে গেছে পুরো ক্রিকেট বিশ্ব। চারদিনের নাটকীয় লড়াই শেষে বাংলাদেশ এখন এমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে, যেখান থেকে জয় ধরা পড়া যেন কেবল সময়ের ব্যাপার! গল টেস্টের পঞ্চম দিন ঘুম ভাঙবে একটি স্বপ্নের আশায়—বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইতিহাস গড়তে চলেছে!

চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ড বলছে, দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান। ১৮৭ রানে এগিয়ে টাইগাররা। হাতে রয়েছে ৭টি উইকেট, ক্রিজে অপরাজিত দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার—৫৬ রানে নাজমুল হোসেন শান্ত ও ২২ রানে প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকানো মুশফিকুর রহিম।
এই মুহূর্তে, বাংলাদেশের না জেতাটাই হবে অস্বাভাবিক!

প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের করা ৪৯৫ রানের জবাবে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করেছিল দারুণভাবে। একপর্যায়ে ৪ উইকেটে ৩৬৮ রান তোলা লঙ্কানরা মনে করিয়ে দিয়েছিল নিজেদের ঘরের মাঠে অপ্রতিরোধ্য অবস্থান।
কিন্তু দিন গড়াতেই গল্পটা ঘুরে যায়। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের ভয়ংকর জুটি ভেঙে দেয় স্পিনার নাঈম হাসান। তিনি একাই তুলে নেন ৫ উইকেট, গুঁড়িয়ে দেন শ্রীলঙ্কার স্বপ্ন।
শেষ পর্যন্ত ৪৮৫ রানেই থেমে যায় শ্রীলঙ্কার ইনিংস, বাংলাদেশের থেকে মাত্র ১০ রানে পিছিয়ে।

বড় রানের চাপ কিংবা শ্রীলঙ্কার স্পিন সহায়ক উইকেট—কোনো কিছুই থামাতে পারেনি টাইগার ব্যাটসম্যানদের। সাদমান ইসলাম খেলেন দুর্দান্ত ইনিংস—১২৬ বলে ৭৬ রান, যার মধ্যে ছিল সাতটি দৃষ্টিনন্দন বাউন্ডারি।
নাজমুলের সঙ্গে গড়েন ৬৮ রানের মূল্যবান জুটি। আউট হওয়ার আগে দলের স্কোরকে এগিয়ে দিয়ে যান সামনের লড়াইয়ের মঞ্চ প্রস্তুত করে।

এরপর মাঠে নামেন অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিম। প্রথম ইনিংসে সেঞ্চুরি করে ফের ঝলকে ওঠেন। শান্তর সঙ্গে তাঁর অপরাজিত জুটি এখনো লঙ্কানদের ঘুম হারাম করে রেখেছে।

চতুর্থ দিনে উইকেট কিছুটা খামখেয়ালি আচরণ করলেও তা বড় কোনো বিপদ ডেকে আনেনি। দিনের শুরুতে শ্রীলঙ্কার ধারাভাষ্যকার রাসেল আর্নল্ড আশঙ্কা করেছিলেন স্পিনারদের জন্য বাড়তি সুবিধা—কিন্তু তা খুব বেশি কার্যকর হয়নি।

নাঈম হাসান তাঁর উচ্চতা কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত বাউন্সে উইকেট তুলে নেন। অন্যদিকে পেসার হাসান মাহমুদ বাউন্সার ও লাইন-লেংথের মিশেলে লেজের দিকের ব্যাটসম্যানদের রীতিমতো ভয় পাইয়ে দেন।
উইকেটের পেছনে লিটন দাসের চোখ ধাঁধানো ক্যাচ ও গোছানো ফিল্ডিং টিমকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস দিয়েছে।

সাদমান ইসলামের এই ইনিংস মনে করিয়ে দিয়েছে ২০২৪ সালের নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কিংস্টনে তাঁর সাহসী পারফরম্যান্সের কথা। সেই ম্যাচে তাঁর ব্যাটেই শুরু হয় বাংলাদেশের পাল্টা জবাব।
গল টেস্টেও তাঁর ব্যাট থেকেই এসেছে ছন্দের ছোঁয়া, যা প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলার মূল উপাদান।

দিনের শুরুতে মেঘ জমলেও গল শহরের আকাশ ভেসে যায় বৃষ্টি ছুঁয়ে। ফলে খেলা হয়েছে পুরোদিনই, যা ম্যাচের রং বদলে দিয়েছে। দ্বিতীয় ইনিংসে অতিরিক্ত রান তুলে জয়কে আরও বাস্তব করে তুলেছে বাংলাদেশ।

শেষ দিনে বাংলাদেশের সামনে তিনটি লক্ষ্য—
১. দ্রুত আরও কিছু রান তুলে শ্রীলঙ্কার সামনে ৩০০+ রানের টার্গেট দাঁড় করানো।
২. দ্রুত ব্যাটসম্যানদের সরিয়ে দিয়ে চাপ সৃষ্টি করা।
৩. সময় ও বৃষ্টির হিসাব মেলাতে মেধা ও ম্যানেজমেন্টের সর্বোচ্চ প্রয়োগ।

এই টেস্টে ড্র, হার কিংবা জয়—সবই এখনো সম্ভব। তবে স্পষ্টত বাংলাদেশের পালে এখন জয়রথের হাওয়া।

গল টেস্ট এখন এক নাটকীয় ক্লাইম্যাক্সের অপেক্ষায়। এই টেস্ট ম্যাচ কেবল একটি স্কোরবোর্ডের হিসাব নয়, এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সাহস, আত্মবিশ্বাস আর ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি।
শেষ দিনের শুরুতেই যদি টাইগাররা পরিকল্পনা মতো এগোতে পারে, তাহলে গল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের ইতিহাসে লেখা থাকবে আরও একটি অবিস্মরণীয় অধ্যায়—বাংলাদেশের বিজয়ের গল্প!

没有找到评论