দক্ষিণাঞ্চলভিত্তিক জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক তীব্র রাজনৈতিক ক্ষোভ ও শোক প্রকাশ করেছেন ফেসবুক স্ট্যাটাসে। তিনি বলেন, "খুনি হাসিনার নির্দেশে গুলিতে নিহত সহযোদ্ধা হাসানের মাথার খুলি উড়ে গিয়েছিল। সেই শহীদের জানাজা আজ অনুষ্ঠিত হলো শহীদ মিনারে।"
হাসানকে তিনি ‘জুলাই অভ্যুত্থানের সর্বশেষ শহীদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন এবং বলেন, “হাসান বুক টানটান করে দাঁড়িয়েছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে।”
অদৃশ্য চাপে বিচার বন্ধ?
শনিবার দিনগত রাতে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেওয়া পোস্টে হাসনাত আব্দুল্লাহ এক বিস্ফোরক দাবি করেন: “আমরা এত প্রাণ ও রক্তের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট শক্তির হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে এনেছি। আমাদের প্রথম দায়িত্ব ছিল খুনিদের বিচার নিশ্চিত করা। কিন্তু, যেন কোনো অদৃশ্য ইশারায় সেই কাঙ্ক্ষিত বিচারপ্রক্রিয়া থমকে গেছে।”
তিনি দাবি করেন, “বিচার চাইলে আমাদের দীর্ঘসূত্রিতা দেখানো হয়। শোনানো হয় নানা যুক্তি ও ব্যাখ্যা।” এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি প্রকাশ্যে বিচারপ্রক্রিয়ার স্থবিরতা ও ক্ষমতাকেন্দ্রিক বাধার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
হাসিনার বিচার ছাড়া সরকার চলবে না?
হাসনাত আব্দুল্লাহ আরও বলেন, “এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুনি হাসিনার বিচার না করে কোথাও যেতে পারবে না। গণহত্যার মাস্টারমাইন্ডদের বিচারের মুখোমুখি না করে আসিফ নজরুল স্যারও তার পদের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবেন না।”
এই বক্তব্যে তিনি ইঙ্গিত করেছেন, বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার যদি হেফাজতের মতো হত্যাকাণ্ড ও রাজনৈতিক হত্যার বিচারে অগ্রগতি না আনে, তাহলে তারা গণআস্থার জায়গা হারাবে।
আসলেই থেমে গেছে বিচার?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই বক্তব্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়সন্ধিক্ষণে এসেছে, যখন দেশের রাজনৈতিক মেরুকরণ আবারও তীব্র হচ্ছে। বিচারপতি ও প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে এই ধরনের মন্তব্য বিচারব্যবস্থার ওপর চাপ সৃষ্টি করার কৌশল হিসেবেও দেখা হচ্ছে। অন্যদিকে, সমর্থকেরা মনে করছেন—এই সাহসী উচ্চারণে বিচারপ্রক্রিয়ার অসাড়তা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হবে।
নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, যদি প্রকৃতপক্ষে কোনো নিরপেক্ষ তদন্ত না হয় এবং শহীদদের বিচারপ্রক্রিয়া রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে থেমে যায়, তাহলে জনআস্থা একেবারেই হারিয়ে যাবে। একইসঙ্গে ফেসবুকের মতো মাধ্যমে প্রকাশিত এমন স্টেটমেন্ট রাষ্ট্রীয় নীতির ক্ষেত্রে গুরুত্ব পাচ্ছে বলেও মত তাদের।
হাসনাত আব্দুল্লাহর ফেসবুক পোস্ট একটি সহজ অভিব্যক্তি নয়—এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থা, বিচারপ্রক্রিয়া এবং গণচাপের ওপর একটি চ্যালেঞ্জ। শহীদ মিনারে জানাজা এবং ফেসবুকে ক্ষোভ—দুই মিলে এক নতুন মাত্রা তৈরি করেছে। এখন দেখার বিষয়—সরকার বা প্রশাসন কী পদক্ষেপ নেয়, নাকি এই বিচারও আরও একবার ‘অদৃশ্য ইশারায়’ থমকে যায়?