ক্ষমতা হারানোর পর আদালতের দ্বারস্থ হলেও প্রত্যাশিত ফল না পেয়ে এবার রাজপথে ফেরার ঘোষণা দিলেন পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান।
কারাবন্দি অবস্থায় থেকেই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেবেন—এমনটাই জানিয়ে দিয়েছেন দলের শীর্ষ আইনজীবী ও সিনেটর আলি জাফর। শনিবার (৩১ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “ইমরান খান এখনো দলের মূল চালক। তিনি আমাকে আন্দোলনের রূপরেখা তৈরির দায়িত্ব দিয়েছেন। এবং জানিয়ে দিয়েছেন, ‘আমি জেল থেকেই নেতৃত্ব দেব।’”
পাকিস্তানের জিও টিভির বরাতে জানা যায়, সরকারবিরোধী এই আন্দোলনকে ইমরান খান ও তার দল চূড়ান্ত ধাপে নিয়ে যাচ্ছে। এখন আর দল অপেক্ষা করবে না আদালতের রায়ের জন্য বা প্রশাসনের সদিচ্ছার জন্য।
আলি জাফর বলেন, "আমাদের আর পেছনে যাওয়ার উপায় নেই। জনগণের জন্য, ন্যায়ের জন্য রাস্তায় নামতে হবে। আদালত বা প্রশাসন কিছুই আমাদের জন্য কাজ করছে না। আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গেছে।"
‘এটা হবে নজিরবিহীন আন্দোলন’: দেশজুড়ে প্রস্তুতি
আন্দোলন কতটা ব্যাপক হবে সে সম্পর্কে আলি জাফর বলেন, “এই আন্দোলন হবে পাকিস্তানের ইতিহাসে নজিরবিহীন। সমন্বিত এবং শক্তিশালী আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার পুনরুদ্ধারের লড়াই হবে এটা।”
তিনি জানান, ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনা করে একটি পূর্ণাঙ্গ রোডম্যাপ তৈরি করা হবে। এরপর সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী দলের নেতাকর্মীদের দায়িত্ব ভাগ করে দেবেন খোদ ইমরান খান।
এদিকে, দলীয় নেতাদের সঙ্গে কারাগারে বৈঠকে ইমরান খান নিজেই সবাইকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেন, "এই আন্দোলন ইসলামাবাদকেন্দ্রিক নয়, এটি হবে সারাদেশব্যাপী।"
পরিবারের অভিযোগ: ‘নিপীড়ন আরও বেড়েছে’
কারাবন্দি অবস্থায় ইমরান খানের সঙ্গে তার সন্তানদের দেখা করার সুযোগ নেই বলেই অভিযোগ করেছেন তার বোন আলিমা খান। তিনি আরও জানান, বই পাঠানো, চিকিৎসকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরীক্ষা—এসব মৌলিক সুযোগ থেকেও বঞ্চিত রাখা হচ্ছে সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে।
আলিমা খান বলেন, “এভাবে একজন রাজনৈতিক নেতাকে চুপ করিয়ে রাখা যায় না। তার কণ্ঠস্বর এখনো জনতার হৃদয়ে।”
‘দ্বিমুখী খেলোয়াড়দের জন্য দলে জায়গা নেই’
কারাগারে বসেই দলীয় নেতাদের উদ্দেশে ইমরান খান স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন: “দ্বিমুখী খেলোয়াড়দের জন্য পিটিআই-তে কোনো স্থান নেই। আমি আজীবন জেলেও থাকি, তবুও আপস করব না। মাথা নত করব না।”
তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ও আনুগত্যের ওপর বিশেষ জোর দেন এবং স্পষ্ট করে বলেন, “এই লড়াই কেবল আমার মুক্তির জন্য নয়—এটা জাতীয় মুক্তির জন্য।”
কারাবন্দিত্ব, মামলা ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
৭১ বছর বয়সি ইমরান খান ২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে কারাগারে আছেন। তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ, দুর্নীতি—সহ একাধিক মামলা চলছে।
২০২২ সালের এপ্রিলে অনাস্থা ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা হারান তিনি। এর পর থেকেই তার দল পিটিআই রাজনৈতিক নিপীড়নের অভিযোগ করে আসছে।
এমন প্রেক্ষাপটে ইমরান খানের কারাগার থেকে আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার ঘোষণা পাকিস্তানের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি শুধু একটি প্রতিবাদ কর্মসূচি নয়—বরং রাষ্ট্রীয় নীতির বিরুদ্ধে সরাসরি চ্যালেঞ্জ।
পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান এখনো সবচেয়ে আলোচিত ও প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। জেল থেকে নেতৃত্ব দিয়ে আবারও তিনি প্রমাণ করলেন, আপাতত তার রাজনীতি শেষ নয়—বরং আরেকটি অধ্যায় শুরু হচ্ছে।