মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের যৌথ হামলায় ইরানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলো—নাতানজ, ইসফাহান ও ফোরদো—বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গেছে বলে জানিয়েছে পেন্টাগন। এই ঘটনার পর পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে টানটান উত্তেজনা, আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বজুড়ে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন—"আমরা জবাব দেওয়ার পূর্ণ অধিকার রাখি।"
ইসরায়েলের আগ্রাসনের পর মার্কিন বাহিনী সরাসরি হামলায় যুক্ত হওয়ায় এখন ইরানের সামনে তিনটি রাস্তা—কোন পথে হাঁটবে তেহরান?
বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রথম কৌশল হতে পারে—কিছু না করা।
তেহরান যদি চুপ থাকে, তাহলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের হুমকি অনুযায়ী আরেকটি কঠিন হামলা এড়ানো সম্ভব হতে পারে। তাতে কূটনৈতিক আলোচনার সুযোগ বাড়বে। তবে এর বড় বিপদ হলো—ইরান দুর্বল ও পরাভব স্বীকার করছে—এমন ভাবমূর্তি তৈরি হবে। মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রভাব কমে যাবে, মিত্রদের আস্থা টাল খাবে।
ইরান চাইলে এখনই চালাতে পারে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন হামলা এবং টর্পেডো আক্রমণ।
মধ্যপ্রাচ্যে অন্তত ২০টি মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে যেগুলো ইরানের সরাসরি হামলার আওতায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, "ঝাঁক বেঁধে মার্কিন নৌবাহিনীর উপর আক্রমণ" চালাতে পারে ইরান।
তবে এতে যুক্তরাষ্ট্রের তীব্র প্রতিক্রিয়া আসবে, এবং সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়বে লোহিত সাগর ও উপসাগরীয় অঞ্চলে।
বিশেষজ্ঞ ফ্রাঙ্ক গার্ডনার মনে করেন, ইরান বেছে নিতে পারে কৌশলগত ধৈর্য।
তারা এই মুহূর্তে চুপ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থার বাইরে থাকা সময়ে পাল্টা আঘাত হানতে পারে। এমন হামলা হবে বেশি প্রভাবশালী ও কম প্রত্যাশিত।
তেহরান এককভাবে নয়, বরং তাদের মিত্র গোষ্ঠীগুলো—হিজবুল্লাহ, হুতি, হামাস—মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানতে প্রস্তুত।
যুক্তরাষ্ট্রে ইরান বিশেষজ্ঞ ডেভিড ফিলিপস বলছেন,
“এটা শেষ নয়, এটা যুদ্ধের শুরু।”
তার মতে, ট্রাম্প সময় না দিয়েই বন্দুকের ট্রিগারে চাপ দিয়েছেন। ইতিমধ্যে মার্কিন বাহিনী অঞ্চলজুড়ে ঝুঁকিতে রয়েছে। প্রায় ৪০ হাজার সেনা এখন বিপদের মুখে।
অন্যদিকে অ্যাডাম উইনস্টেইন বলছেন,
“এটা ইচ্ছাকৃত যুদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্র শুরু করেছে। ইরান এবার পরমাণু কর্মসূচি আরও গোপনে চালাবে।”
বিশ্লেষকের মতে, এনপিটি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার মতো ঝুঁকি এখন তৈরি হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দাবি করেছেন, ইরানের পরমাণু সক্ষমতা ধ্বংস হয়ে গেছে।
কিন্তু ইরানি আইনপ্রণেতারা জানাচ্ছেন, ফোরদোতে ক্ষয়ক্ষতি খুব সামান্য।
তাদের ইউরেনিয়াম মজুত আগেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তাই সম্ভাবনা রয়েছে—ইরান দ্রুত কর্মসূচি সচল করতে পারবে, এমনকি গোপন স্থাপনাতেও কার্যক্রম অব্যাহত থাকতে পারে।
ত্রিতা পারসি, কুইন্সি ইনস্টিটিউটের ভাইস প্রেসিডেন্ট বলছেন,
“এই হামলা বিশ্বকে বড় ঝাঁকুনি দেবে। ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্রে যেতে বাধ্য করবে। আগামী ৫–১০ বছরের মধ্যে ইরান হয়তো একটি পরমাণু শক্তিধর রাষ্ট্র হয়ে উঠবে।”
তিনি আরও বলেন,ইরান এখন আক্রান্ত। ইসরায়েল যুদ্ধ শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্র জড়িয়েছে। ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাবে—এটাই স্বাভাবিক।
মার্কিন নেতৃত্বাধীন হামলার কারণে এখন বিশ্ব আরও একটি দীর্ঘ, জটিল ও রক্তাক্ত সংঘাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
প্রতিশোধ, প্রতিক্রিয়া এবং প্রতিরোধের এই দোলাচলে, প্রশ্ন উঠেছে—
ইরান কতটা শক্তি দিয়ে জবাব দেবে?



















