বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোতে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ হিসেবে জাতিসংঘ মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনের অনুমোদনকে কঠোর সমালোচনা করেছে। দলটি মনে করে, এই অনুমোদন জাতীয় স্বার্থ ও ইসলামী মূল্যবোধের বিরুদ্ধে সরাসরি আঘাত।
সোমবার এক যৌথ বিবৃতিতে খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মুহাম্মাদ মামুনুল হক ও মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ সরকারকে দ্রুত এই অনুমোদন বাতিলের আহ্বান জানান। একই সঙ্গে তারা দেশের সব দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল, আলেম সমাজ, জাতীয়তাবাদী ও ইসলামপন্থী সংগঠন এবং সচেতন নাগরিকদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই দেশবিরোধী উদ্যোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান।
দলটির বিবৃতিতে বলা হয়, জাতিসংঘের এই পদক্ষেপ ও সরকারের অনুমোদন বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও ধর্মীয় পরিচয়ের জন্য গভীর উদ্বেগের বিষয়। এ ধরনের ‘মানবাধিকার কার্যালয়’ দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক জীবনে অযাচিত হস্তক্ষেপের দ্বার উন্মোচন করবে।
খেলাফত মজলিস নেতারা আরো বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়গুলো মুসলিম দেশগুলোর ওপর পশ্চিমা রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। তথাকথিত মানবাধিকারের নামে ইসলামী শরিয়াহ, পারিবারিক আইন, সামাজিক রীতিনীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর চাপ প্রয়োগের অপচেষ্টা চলছে।
একটি স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন এই আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেবে।
বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের জনগণ দীর্ঘদিন ধরেই ফ্যাসিবাদী শাসনের নিষ্ঠুর দমন-পীড়নের শিকার হয়েছে। গুম-খুন, নির্যাতন, ভোটাধিকার হরণ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দমন এবং শাপলা চত্বরে সংঘটিত গণহত্যার মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় জাতিসংঘ নির্বিকার ছিল।
কিন্তু বর্তমানে, ফ্যাসিবাদী শাসনের পতনের পর সুস্থ ধারার রাজনৈতিক বন্দোবস্তের সম্ভাবনা থাকলেও এই ‘মানবাধিকার অফিস’ দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নতুন হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিচ্ছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের ইতিহাস প্রমাণ করে, এই জাতি কখনোই তার ধর্মীয় বিশ্বাস, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার প্রশ্নে আপস করে নি। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এবং সাম্প্রতিক জুলাই-আগস্ট বিপ্লব—সবই দেশের মানুষের ইসলামপ্রিয়তা, আত্মমর্যাদা ও স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রমাণ।
সুতরাং জাতিসংঘের এই হস্তক্ষেপমূলক উদ্যোগ নতুন রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ছাড়া কিছু নয়।
খেলাফত মজলিস এ বিষয়ে সরকারের কাছে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেছে, দেশের সার্বভৌমত্ব ও ইসলামী মূল্যবোধ রক্ষায় সকলে ঐক্যবদ্ধ হোন।
এভাবেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনমতের স্বার্থে এই বিতর্কিত অনুমোদনের বিরুদ্ধে খেলাফত মজলিস এক জোরালো প্রতিবাদ গড়ে তুলেছে। তারা আশা করছে এই বিবৃতি দেশের স্বতন্ত্রতা ও ধর্মীয় ঐতিহ্য রক্ষায় গণমানুষকে জাগ্রত করবে এবং সরকার দ্রুত এই অনুমোদন বাতিল করবে।