close

লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকে ড. ইউনূসের বড় ঘোষণা: ‘নির্বাচন হবে ডিসেম্বরেই, যদি সংস্কার প্যাকেজে একমত হয় রাজনৈতিক দলগুলো’..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ ঢাকায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তারা নির্বাচনের সময়, রোহিঙ্গা সংকট, এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উপর আলোচনা করেন। ড. ইউনূস জানিয়ে দি..

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আজ শুক্রবার ঢাকায় অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তেজগাঁওয়ে তার কার্যালয়ে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল বাংলাদেশের নির্বাচনের সময়সূচি এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি। অধ্যাপক ইউনূস জানিয়ে দেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলো ‘সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজ’ নিয়ে একমত হয়, তবে নির্বাচন ডিসেম্বরেই অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে, যদি তারা ‘বৃহৎ সংস্কার প্যাকেজ’ গ্রহণ করে, তবে নির্বাচন আগামী বছরের জুনে অনুষ্ঠিত হবে।

ড. ইউনূস এই বৈঠকে নিশ্চিত করেন যে, নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং অংশগ্রহণমূলক হবে এবং তার সরকার এ ব্যাপারে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলো ইতোমধ্যে প্রায় ১০টি কমিশনের সুপারিশের ওপর মতামত জমা দিয়েছে এবং দলগুলো তাদের মতামত দিয়ে একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে প্রস্তুত।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বৈঠকে বলেন, ‘আমি সংস্কার প্রক্রিয়ার প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছি। আমরা আপনার সংস্কার প্রচেষ্টাকে সহায়তা দিতে এখানে এসেছি এবং আপনাদের সর্বোত্তম সফলতা কামনা করি।’ তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, সংস্কার প্রক্রিয়া একটি অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন এবং দেশের জন্য একটি বাস্তব রূপান্তর নিশ্চিত করবে। তিনি আরো বলেন, ‘আমি জানি যে সংস্কার প্রক্রিয়া জটিল হতে পারে, তবে আমরা আপনার পাশে আছি।’

গুতেরেস মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগণের জন্য মানবিক সহায়তা হ্রাস নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘পৃথিবীতে এতটা বৈষম্যের শিকার অন্য কোনো জনগোষ্ঠী আমি দেখিনি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলতে বসেছে। মানবিক সহায়তা হ্রাস করা একটি অপরাধ।’

তিনি রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং বলেন, ‘বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের প্রতি অত্যন্ত উদারতা দেখিয়েছে।’ গুতেরেস আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী আমার জন্য একটি বিশেষ বিষয়।’

অধ্যাপক ইউনূস জাতিসঙ্ঘ মহাসচিবকে রোহিঙ্গাদের জন্য সম্মানের সাথে মিয়ানমারের পশ্চিম রাখাইন রাজ্যে ফেরত যাওয়ার জন্য সহায়তা প্রদানের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, ‘ততদিন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য ও মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।’

বৈঠকে আরো আলোচনা হয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সংস্কারের পরিকল্পনা নিয়ে। ড. ইউনূস জানান, তার সরকার উত্তরাধিকারসূত্রে ধ্বংসপ্রাপ্ত ব্যাংকিং খাত, সংকুচিত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এবং ভেঙে পড়া আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন করেছে। তিনি আশাবাদী যে, বাংলাদেশ শিগগিরই এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণে সক্ষম হবে।

জাতিসঙ্ঘ মহাসচিব গুতেরেস বাংলাদেশকে তার শান্তিরক্ষী বাহিনীর কার্যক্রমের জন্য প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের শান্তিরক্ষী বাহিনী আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তারা বিশ্বের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় অসাধারণ ভূমিকা রেখেছে।’

এছাড়া, বৈঠকে ভূ-রাজনীতি, দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক ফোরাম এবং বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী দেশগুলোর সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা হয়েছে। অধ্যাপক ইউনূস জানান, বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আসিয়ানের সদস্য হতে চায়।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘আমরা এলডিসি উত্তরণের জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি। পূর্ববর্তী সরকারের শাসনামলে লুটপাট হওয়া কয়েক শ’ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ফেরত আনার জন্য সরকার চেষ্টা করছে।’

বৈঠকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলী সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান এবং এসডিজি বিষয়ক সিনিয়র সচিব লামিয়া মোরশেদ উপস্থিত ছিলেন। জাতিসঙ্ঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল রাবাব ফাতিমা ও বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুইন লুইসও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Ingen kommentarer fundet


News Card Generator