close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে যে বার্তা দিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইরান-ইসরায়েল ভয়াবহ সংঘাতে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য। এমন সংকটময় সময়ে জাতির উদ্দেশে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। প্রশাসন ও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি প্রতি..

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতি দিন দিন যেভাবে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে, ঠিক সেই মুহূর্তে জাতির উদ্দেশে এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছেন ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান। দেশের গভীর সংকটে তিনি তার বক্তব্যে জনগণের প্রতি সহানুভূতি, সাহস, ঐক্য ও দৃঢ়তার বার্তা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন), সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারিত এক ভিডিও বার্তায় প্রেসিডেন্ট বলেন, “আমাদের সামনে এখন কঠিনতম সময়। এই মুহূর্তে সরকারের প্রতিটি বিভাগ, প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে – ধৈর্য, সাহস আর একতার সঙ্গে।”

তিনি আরও বলেন, “যারা এই দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাদের প্রথম দায়িত্ব মানুষের জন্য কাজ করা। এই কঠিন সময়ে কেউ যেন বিমুখ না হয়। আশা করি, আমাদের পারস্পরিক সহানুভূতি আর জাতীয় ঐক্য দিয়ে আমরা এই সঙ্কট কাটিয়ে উঠব।

১২ জুন রাত। হঠাৎই এক নজিরবিহীন হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ নামে চালানো এই অভিযানে রাজধানী তেহরান থেকে শুরু করে ইরানের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামরিক ঘাঁটি, পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র এবং আবাসিক এলাকাগুলোতে ব্যাপকভাবে মিসাইল ও ড্রোন হামলা চালায় ইহুদিবাদী সেনারা।

এই নৃশংস হামলায় প্রাণ হারান ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান মোহাম্মদ বাঘেরি, ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) কমান্ডার হোসেইন সালামি এবং খাতাম আল-আনবিয়া সদরদপ্তরের প্রধান মেজর জেনারেল গোলাম আলি রশিদ। এছাড়াও প্রাণ হারান ছয়জন পরমাণু বিজ্ঞানীসহ আরও কয়েক শতাধিক ইরানি নাগরিক।

এই হামলাকে ইরানের ইতিহাসে অন্যতম ভয়ঙ্কর ‘কমান্ড ডিসরাপশন অ্যাটাক’ হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন সামরিক বিশ্লেষকরা। দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কাঠামো এবং জ্ঞানসম্পন্ন মস্তিষ্ক এক নিমেষে ধ্বংস করার অপচেষ্টা চালায় ইসরায়েল।

ইসরায়েলের এই আগ্রাসনের জবাবে ইরান একদিনের ব্যবধানে পাল্টা অভিযানে নামে। শুক্রবার রাতে শুরু হয় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিস-৩’। এই অভিযানে ইরান তাদের ব্যালিস্টিক মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করে ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়।

যদিও ইসরায়েলি পক্ষ দাবি করেছে, তাদের ক্ষয়ক্ষতি সীমিত, তবে বাস্তবচিত্র বলছে অন্য কথা। দেশটির অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি ভয়াবহ এবং সাধারণ মানুষ ব্যাপক আতঙ্কে রয়েছে। ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করছেন হাজার হাজার মানুষ।

ইরানি সামরিক মুখপাত্ররা জানিয়েছেন, এই প্রতিশোধমূলক অভিযান চলমান থাকবে যতক্ষণ না “শত্রু শক্তি” পুরোপুরি পিছু হটে।

প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের ভাষণ শুধু প্রশাসনিক নির্দেশ ছিল না, বরং তা ছিল একটি জাতির মনোবল জাগানিয়া বার্তা। তিনি বলেন, “আমরা প্রতিশোধের আগুনে জ্বলছি না, আমরা ন্যায়বিচারের দাবিতে যুদ্ধ করছি। বিশ্বের সামনে প্রমাণ করতে চাই, ইরান কখনো মাথানত করে না।”

এই বক্তব্যে ইরানের অভ্যন্তরে যেমন আশাবাদের সঞ্চার হয়েছে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধকে ঘিরে এর পরিণতি কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, সেটাই এখন বিশ্বমঞ্চের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ।

ইরান-ইসরায়েলের চলমান সংঘাত মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে অস্থিরতা ছড়িয়ে দিয়েছে। এই সংকটকালীন সময়ে প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানের ভাষণ শুধু এক দেশের জনগণকেই অনুপ্রাণিত করেনি, বরং গোটা মুসলিম বিশ্বে শক্তির বার্তা ছড়িয়েছে। ইরান এখন শুধু অস্ত্রের নয়, আদর্শ ও মনোবলের যুদ্ধেও এক বলিষ্ঠ প্রতিপক্ষ।

No comments found