close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

জাতীয় দলে খেলার স্বপ্নে কোটি টাকার প্র তা র ণা

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের ‘জাতীয় দলে খেলা’র স্বপ্ন দেখিয়ে চলছে কোটি টাকার রেজিস্ট্রেশন বাণিজ্য। ‘ট্যালেন্ট হান্ট’-এর নামে কিছু প্রতিষ্ঠান নিয়ে নিচ্ছে টাকা, দিচ্ছে না কোনো ভবিষ্যৎ। স্কুল-কলেজের কোমলমতি শিক..

সামনে আসছে বিশ্বমানের ক্রিকেটার তৈরির স্বপ্ন, আর পেছনে চলছে কিশোরদের চোখে ধুলো দিয়ে কোটি টাকার ব্যবসা। ‘জাতীয় দলে সুযোগ’ পাওয়ার প্রলোভনে, ‘ট্যালেন্ট হান্ট বিডি’-র ব্যানারে হাজার হাজার স্কুলগামী শিক্ষার্থীর কাছ থেকে রেজিস্ট্রেশন ফি হিসেবে আদায় করা হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অথচ বাস্তবে নেই কোনো মানসম্মত নির্বাচন, নেই কোনো উন্নয়নমূলক প্রস্তুতি।

প্রতিযোগিতার নাম ‘ক্রিকেট ট্যালেন্ট হান্ট–২০২৫’। বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও জেলার শিক্ষার্থী, অভিভাবক এবং শিক্ষকদের বিশ্বাসকে পুঁজি করে এই কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রতিযোগীর কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে ২০০ টাকা করে রেজিস্ট্রেশন ফি। দেশের প্রায় ৪০ হাজার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে রেজিস্ট্রেশন বাড়ানোর লক্ষ্যে একটি সরকারি চিঠিও জারি করা হয়েছে। অথচ বাস্তবতা হলো—প্রতিযোগিতার নামে মাঠে নামানো হয়েছে কিছু অস্পষ্ট আয়োজন আর চটকদার ওয়েবসাইট।

উত্তরা ও কয়েকটি বড় শহরে নামমাত্র ট্রায়াল নিয়েই শেষ হয়ে গেছে প্রথম পর্ব। হাজার হাজার শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রেশন করলেও তাদের মধ্যে কেউই জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে অংশ নিতে পারেনি, কিংবা কোথাও স্থান পায়নি। নির্বাচিত হয়েছে বলেও কাউকে কোথাও খেলতে দেখা যায়নি।

বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে শিক্ষার্থীরা ট্রায়ালে অংশ নিতে গিয়ে নিজের খরচে যেতে বাধ্য হয়েছে। অভিভাবকদের ভাষ্য, “ছেলে খেলার সুযোগ পাবে ভেবে খরচ করলাম, এখন বুঝছি শুধু ধোঁকা।”

২০২৫ সালের ২৯ জানুয়ারি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের (মাউশি) শারীরিক শিক্ষা বিভাগ থেকে একটি চিঠি জারি করা হয়, যেখানে বলা হয় "কোনো আর্থিক লেনদেন থাকবে না।" অথচ বাস্তবতা সম্পূর্ণ বিপরীত। ‘পিকেসিএসবিডি’ নামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি তাদের ওয়েবসাইটে রেজিস্ট্রেশনের আহ্বান জানিয়ে রেখেছে এবং প্রত্যেক প্রতিযোগীর কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিচ্ছে।

সেখানে বলা হচ্ছে, “আজই রেজিস্ট্রেশন করো, নিশ্চিত করো অংশগ্রহণ!” আরও বলা হচ্ছে, অংশগ্রহণকারীরা নিজের ড্যাশবোর্ড থেকে অ্যাডমিট কার্ড, সার্টিফিকেট ডাউনলোড করতে পারবে। এটি সরাসরি একটি বাণিজ্যিক প্যাকেজের মতো উপস্থাপন করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শিশু-কিশোর বয়সে এভাবে ‘স্বপ্ন ভেঙে পড়া’ মানসিকভাবে তাদের স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। এ বিষয়ে এক মনোবিদ জানান, “কোনো শিশু যদি বিশ্বাস করে, সে জাতীয় দলে খেলবে—তারপর যদি বুঝতে পারে, সবটাই ছিল ভুয়া—তাহলে সেটি জীবনের বড় মানসিক আঘাত হিসেবে থেকে যায়।”

তিনি আরও বলেন, “এটি শুধু প্রতারণা নয়, একটি প্রজন্মের আত্মবিশ্বাস ভেঙে ফেলার মতো ঘটনা।”

বিভিন্ন জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা মাউশির চিঠি দেখে শিক্ষকদের জানিয়েছি। কিন্তু এখন যেভাবে অর্থ লেনদেন চলছে, সেটা পরিষ্কারভাবে প্রতারণা। আমরা এর দায় নিতে পারি না।”

এমন প্রশ্নের মুখে মাউশির শারীরিক শিক্ষা বিভাগের উপপরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, “আমি নতুন যোগ দিয়েছি। টাকার ব্যাপারটা জানতাম না। ভবিষ্যতে এই প্রতিষ্ঠানকে কোনো কাজ দেওয়া হবে না।”

প্রতিযোগিতার জন্য নির্ধারিত হয়েছে তিনটি গ্রুপ (এ, বি, সি)। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হচ্ছে। অনলাইনে দিতে হবে নিজের বা অভিভাবকের মোবাইল নম্বর, সেখানেই আসবে নির্বাচনের ফল।

সারাদেশে ২৬৪ জন নির্বাচিত হবে বলা হলেও, কোথায় তারা খেলবে বা পরবর্তী ধাপ কী—সে বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা নেই। এই অস্পষ্টতা নিয়েই মূলত বেড়ে চলেছে জনমনে সন্দেহ।

যেখানে একটি ট্যালেন্ট হান্ট কর্মসূচির লক্ষ্য হওয়া উচিত তরুণ প্রতিভা খুঁজে এনে ভবিষ্যতের জন্য গড়ে তোলা, সেখানে এখানে মূল উদ্দেশ্য যেন টাকা আয়। যাদের কাঁধে দেশের ভবিষ্যৎ খেলার সম্ভাবনা, তাদেরই আজ বানানো হচ্ছে ব্যবসার পণ্য।

সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নজরদারি ছাড়া এ ধরনের প্রতারণা বন্ধ করা সম্ভব নয়। প্রয়োজন হচ্ছে, সরকারি অনুমোদনের ব্যাখ্যা, তদন্ত ও প্রতিকারমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার।

Walang nakitang komento