close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

জামায়াতের কেউ নামাজ পড়াতে পারবেন না, হুঁশিয়ারি বিএনপি নেতার..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
পাবনার আটঘরিয়ায় উত্তপ্ত রাজনীতি! জামায়াতের আজান-ইমামতি বন্ধে হুশিয়ারি দিলেন বিএনপি নেতা হাবিবুর রহমান হাবিব। পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে জামায়াত বলছে—এই বক্তব্য ‘ধর্মীয় উসকানি’। জানুন পুরো ঘটনা…..

পাবনার আটঘরিয়ায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে সংঘর্ষের পর। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও পাবনা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান হাবিব এক বিস্ফোরক বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, “আটঘরিয়ায় কোনো মসজিদে জামায়াতের কোনো মুয়াজ্জিন আজান দিতে পারবে না এবং কোনো ইমাম নামাজ পড়াতে পারবে না।”

শনিবার বিকেলে পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দলীয় কর্মীদের দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশে এ কথা বলেন হাবিব। তার বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই ভাইরাল হয়।

'মসজিদে তালা, ইমাম পালিয়ে গেছে'—হাবিবের বিস্ফোরক অভিযোগ

হাবিবুর রহমান বলেন, “ভবিষ্যৎ পরে দেখা যাবে। কিন্তু আজ থেকে আটঘরিয়ায় জামায়াতের কেউ আর আজান দিতে পারবে না, ইমামতি করতে পারবে না। গত শুক্রবার দেবোত্তর বাজার জামে মসজিদে জুমার নামাজ পড়তে পারেনি মানুষ। তালা দিয়ে পালিয়েছে ইমাম। এ ঘটনা অত্যন্ত লজ্জাজনক।”

তিনি আরও বলেন, “তারা মিথ্যা কথা বলে, এদের পেছনে নামাজ হয় না। এরা স্বাধীনতাবিরোধী, রগকাটা গ্রুপ। পাকিস্তানের দোসর ছিল। বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। তাই আটঘরিয়াবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি, এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”

জামায়াতের বিরুদ্ধে কোরআন পোড়ানোর অভিযোগ

হাবিবুর রহমানের দাবি, জামায়াতের নেতাকর্মীরা নিজেরাই কোরআন শরিফ পোড়িয়েছে এবং এর দায় বিএনপির ওপর চাপানোর অপচেষ্টা করছে। তিনি বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীরা কোরআন পোড়ায়নি। বিএনপির কেউ এটা করতে পারে না। যদি ভিডিও ফুটেজ দেখাতে পারেন যে বিএনপি কর্মী কোরআন পোড়িয়েছে, তাহলে আমি সব দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত।”

তিনি আরও বলেন, “জামায়াত আমাদের প্রায় একশ মোটরসাইকেল ভেঙেছে। এর ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তাদের।”


জামায়াতের প্রতিক্রিয়া: ‘ধর্মীয় উসকানি ও নাটক’

এদিকে বিএনপি নেতার এমন বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে আটঘরিয়া উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা নকীবুল্লাহ। তিনি বলেন, “একজন দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে হাবিব সাহেব যে বক্তব্য দিয়েছেন তা ধর্মীয় উসকানিমূলক ও অত্যন্ত দুঃখজনক। মানুষ এই বক্তব্যকে ভালোভাবে নেয়নি। বরং ধিক্কার জানিয়েছে।”

তিনি অভিযোগ করেন, “৫ আগস্টের পর থেকে আটঘরিয়ায় বিএনপি আওয়ামী লীগ স্টাইলে অফিস, স্কুল দখল করে নিচ্ছে। চাঁদাবাজি চলছে সর্বত্র। আমরা এর প্রতিবাদ করতেই টার্গেট হচ্ছি।”

নকীবুল্লাহ আরও অভিযোগ করেন, “বিএনপির সন্ত্রাসীরা ঈশ্বরদী থেকে অস্ত্রধারী বাহিনী এনে আমাদের ওপর হামলা করেছে। আমাদের অফিস, দোকান, বাড়িঘর পুড়িয়ে দিয়েছে। কোরআন শরিফ পর্যন্ত পুড়িয়ে দিয়েছে তারা। গত জুমার নামাজ পড়তে দেয়নি। মসজিদে তালা দিয়ে ইমামকে হুমকি দিয়েছে।”


সংঘর্ষের পেছনের ঘটনা: কলেজ নির্বাচনের ফরমকে কেন্দ্র করে সহিংসতা

সূত্র জানায়, বৃহস্পতিবার আটঘরিয়ার দেবোত্তর ডিগ্রি কলেজের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে ফরম তোলা নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই জেরে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীরা উপজেলা জামায়াতের অফিসে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। রাত ৯টার দিকে গুলিও ছোড়া হয় বলে অভিযোগ। অপরদিকে জামায়াতের কর্মীরাও বিএনপির অফিস ও মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে।

উভয় পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে দোষারোপ করছে এবং স্থানীয় রাজনীতিতে এই সংঘর্ষ নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে।

 

ধর্মীয় স্থানে রাজনীতির ছায়া

এই ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট। অনেকেই বলছেন, মসজিদ বা ইমাম-মুয়াজ্জিনদের ধর্মীয় দায়িত্বকে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ বানানো অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নামাজের ময়দান রাজনীতির হাতিয়ার হলে সামাজিক শান্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা থেকেই যায়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিএনপি ও জামায়াতের পুরনো সম্পর্ক এখন ভেঙে চুরমার। একদিকে রাজনৈতিক অবস্থানগত বিরোধ, অন্যদিকে ধর্মীয় বিষয়েও পরস্পরকে টার্গেট করা শুরু হয়েছে।



আটঘরিয়ার সাম্প্রতিক সংঘর্ষ শুধু একটি রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব নয়, বরং ধর্ম, সমাজ ও নিরাপত্তার প্রশ্নে বড় ধরনের সংকেত। দুই দলের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, ধর্মীয় মূল্যবোধের অপব্যবহার এবং সহিংসতা—সব মিলিয়ে এই ঘটনায় সারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন নড়েচড়ে বসেছে।

没有找到评论


News Card Generator