জামায়াত শিং মাছের মতো— ধরতে গেলেই বিদ্ধ করে, এমনকি ছাই দিয়েও! এমনই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানালেন লেখক ও গবেষক নাদিম মাহমুদ।
তিনি বলেছেন, জামায়াতে ইসলামীর সাম্প্রতিক ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ আসলে একাত্তরের ভয়াবহ অপরাধকে লঘু করে তোলার একটি পরিকল্পিত প্রচেষ্টা। ৫ জুন নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে এক স্ট্যাটাসে তিনি এসব কথা বলেন।
নাদিম মাহমুদ স্পষ্ট করে বলেন, “জামায়াত একাত্তরকে আজও ভারতের যুদ্ধ হিসেবে দেখে। তারা পাকিস্তান ভাঙার জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকেই দায়ী করে।” তাঁর মতে, এমন একটি রাজনৈতিক দল, যারা স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, আজ পর্যন্ত তাদের অবস্থান স্পষ্টভাবে স্বীকার করে ক্ষমা চায়নি, বরং বিভিন্ন রকমের কৌশলে জাতিকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে।
তিনি আরও বলেন, “জামায়াতের আমির দাবি করেছেন, ১৯৪৭ থেকে ২০২৫ পর্যন্ত যদি কেউ তাদের দ্বারা কষ্ট পেয়ে থাকেন, তবে তিনি ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে— কেন এই সময়সীমা? কেন ১৯৪৭ থেকে? কেন ২০২৫ পর্যন্ত টানলেন? জাতি তো ১৯৭১ সালের জন্য, যুদ্ধাপরাধের জন্য ক্ষমা চাইতে বলেছে। ১৯৫২ বা ১৯৬৫ নয়। জামায়াত চায় সেই মূল দায়টা এড়িয়ে যেতে।
নাদিম মাহমুদ অভিযোগ করেন, “জামায়াত জানে তারা ১৯৭১-এ কী করেছিল। তারা জানে আলবদর-আলশামস-রাজাকার বাহিনীর নির্মমতা কত ভয়ংকর ছিল। কিন্তু আজও তারা সেই দায় মেনে নিচ্ছে না। তারা বলছে— তারা তখন ছোট ছিল, নেতৃত্বে ছিল না, এমনকি বলছে শেখ মুজিব তাদের ক্ষমা করে দিয়েছেন, গোলাম আজমও নাকি ক্ষমা চেয়েছেন! এসবই হলো সত্য আড়ালের কৌশল।
তিনি লেখেন, “একটি রাজনৈতিক দল, যারা স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করে স্বীকার করে না, যারা আজও ইতিহাস বিকৃতি করে চলে— তাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার আশা করা একধরনের আত্মপ্রবঞ্চনা। তারা জানে, একাত্তর নিয়ে সরাসরি কিছু বললেই জনরোষে পড়বে। তাই তারা দীর্ঘ সময়সীমা টেনে ‘সব কষ্টের’ জন্য দুঃখ প্রকাশ করছে, যাতে মূল অপরাধটিকে চাপা দেওয়া যায়।
নাদিম মাহমুদ সতর্ক করেন, “এই জামায়াতই ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশে প্রেস ক্লাবে জিন্নাহর জন্মদিন পালন করেছিল, পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস পালন করেছিল। তারা সুযোগ পেলেই আবার পূর্ব-পশ্চিমের মেলবন্ধন গড়তে চাইবে। এই দল একাত্তরের দায় এড়িয়ে গিয়ে নতুন প্রজন্মকে ইতিহাস থেকে দূরে রাখার চক্রান্ত করছে।
তিনি আরও বলেন, “আজ যারা জামায়াতের ‘ক্ষমা প্রার্থনা’ শুনে গদগদ, তারা মনে রাখবেন— এরা আজও ইতিহাস বিকৃতি করে, আজও একাত্তর নিয়ে অন্ধকারে থেকে যায়। এই অন্ধকার থেকেই তারা আবারো ফিরে আসতে চায়— মুখোশ পরে, ভদ্রবেশে।
নাদিম মাহমুদের বক্তব্য আমাদের মনে করিয়ে দেয়— ইতিহাস নিয়ে উদাসীনতা, ভুল ক্ষমা প্রার্থনার নামে রাজনৈতিক পুনর্বাসন কিংবা ভুলে যাওয়ার সংস্কৃতি ভবিষ্যতের জন্য মারাত্মক হুমকি হতে পারে।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সৎ অবস্থান না থাকলে, জাতি বারবার বিভ্রান্ত হবে, আর ইতিহাসের পেছনে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারই ফিরে আসবে নতুন চেহারায়।