জামায়াত ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গঠন হবে — এই বার্তা দিলেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
তিনি বলেন, “স্বৈরাচার যতই শক্তিশালী হোক না কেন, জনগণের রায় ও ইচ্ছার সামনে তার পতন অবশ্যম্ভাবী।” গতকাল রবিবার (২৫ মে) মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে এক ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব বলেন তিনি।
সরকারের দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অর্থপাচার নিয়ে তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন জামায়াতের আমির।
তিনি বলেন, “এই সরকারের আমলে মানুষ গুম হয়েছে, মৌলিক অধিকার হরণ হয়েছে। দেশে দেশে বেগমপাড়া তৈরি হয়েছে, বিদেশে পাচার হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা।” তিনি উল্লেখ করেন, “স্বৈরাচার সরকার দেশের মধ্যে আয়নাঘর তৈরি করেছে, যেখানে জনগণের কণ্ঠ রোধ করে ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে চেয়েছে।”
আওয়ামী লীগ সরকারের সমালোচনায় তিনি বলেন, “একসময় তারা মানুষকে পশুর মতো ব্যবহার করত, অথচ যখন পালানোর সময় এলো, তখন নেতাকর্মীদের কিছু না জানিয়েই তারা নিজেদের জীবন নিয়ে পালিয়ে গেল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।”
দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার বক্তব্য ছিল স্পষ্ট ও জোরালো। তিনি বলেন, “আমরা গরু চোরকে ঘৃণা করি, অথচ যারা কলমের খোঁচায় রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা নিরব থাকি। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।”
ডা. শফিকুর রহমান তার বক্তৃতায় বলেন, “আমরা এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে কেউ বৈষম্যের শিকার হবে না। মানুষ শান্তিতে দুবেলা আহার করতে পারবে। জামায়াত যদি ক্ষমতায় আসে, দুর্নীতিবাজদের কঠোর হাতে দমন করা হবে। দুর্নীতিকে দেশ থেকে সম্পূর্ণ উৎখাত করা হবে।”
তরুণ সমাজকে উদ্দীপ্ত করতে তিনি বলেন, “পৃথিবীর যত বড় কল্যাণকর কাজ হয়েছে, সবই হয়েছে যুবকদের হাত ধরে। আমাদের সামনে বিশ্রামের সময় নেই। দেশের প্রতিটি ঘর-বাড়িকে ইসলামী আন্দোলনের ঘাঁটিতে পরিণত করতে হবে। আল্লাহ যদি আমাদের কবুল করেন, তাহলে আমাদের বিশ্রাম হবে জান্নাতুল ফেরদাউসে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা পেশা বা ধর্ম দেখে মানুষকে মূল্যায়ন করবো না। সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়ের ভিত্তিতে সমাজ গঠন করবো।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার শাহেদ আলী এবং পরিচালনা করেন সেক্রেটারি ইয়ামীর আলী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, সিলেট মহানগর জামায়াতের আমির মো. ফখরুল ইসলাম, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, মৌলভীবাজার-১ আসনে মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী মাওলানা আমিনুল ইসলাম এবং সিলেট মহানগরের সহকারী সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট আব্দুর রব।
পূর্ববর্তী এক সভায় তিনি চা-শ্রমিকদের সাথেও মতবিনিময় করেন।
সেখানে ‘করিডর’ ও ‘বন্দর’ নিয়ে সরকার যেসব আলোচনা করছে, তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, “দেশের স্বার্থ যেখানে বিঘ্নিত হবে, সেখানে আমরা কখনো হ্যাঁ বলবো না। যদি করিডর তৈরি করতেই হয়, তবে তা নির্বাচিত সরকারের অধীনে এবং পার্লামেন্টে সকল রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
নির্বাচন প্রসঙ্গে ডা. শফিক বলেন, “আমাদের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, এমন একটি নির্বাচন হবে যা ইতিহাস সৃষ্টি করবে। মানুষ হাসিমুখে ভোট দেবে, কেউ বলবে না—তার ভোট আরেকজন দিয়ে গেছে।”
শেষ কথা:
ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্যে স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে — জামায়াত চায় একটি কল্যাণমুখী, ন্যায়ভিত্তিক ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ। তিনি সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ইসলামি আন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান এবং দুর্নীতি-দমন ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠায় দলটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তুলে ধরেন।