সংলাপে যোগ না দেওয়ার একদিন পরই মোড় ঘুরল রাজনৈতিক মাঠে। প্রধানমন্ত্রী না হলেও এখন তিনি দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা— ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার ভূমিকা ঘিরে সম্প্রতি প্রশ্ন উঠেছে নিরপেক্ষতা নিয়ে। বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর অভিযোগ, তিনি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতার সাথে কথা বলায় সমতা ও ভারসাম্যের জায়গাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বুধবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে অংশ নিয়ে এসব মন্তব্য করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।
প্রধান উপদেষ্টা একটি দলের নেতার সঙ্গে একতরফাভাবে যোগাযোগ করেছেন। এতে বাকি রাজনৈতিক দলগুলো বিব্রত হয়েছে। সেই প্রতীকী প্রতিবাদস্বরূপ আমরা জামায়াত গতকালকের বৈঠকে অংশ নেইনি।
তবে পরিস্থিতি যে এখন কিছুটা বদলেছে, তা স্পষ্ট করেছেন জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা নিজেই। তিনি জানান, আমাদের প্রতিবাদের পর ড. ইউনূস স্বয়ং আমাদের আমিরকে ফোন করেন। তিনি বলেছেন, সরকার নিরপেক্ষ অবস্থানে আছে এবং সব দলের সাথে সমান আচরণ করা হবে। এ আশ্বাস পাওয়ার পরই আমরা আজকের সংলাপে অংশ নিয়েছি।
এই মন্তব্য দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। কারণ, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে শুরু থেকেই বিতর্ক রয়েছে। একদিকে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তোলার চেষ্টা, অন্যদিকে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ—এই দুই স্রোতের মাঝখানে আটকে পড়েছে চলমান সংলাপ প্রক্রিয়া।
জামায়াতের পক্ষ থেকে নারীদের জন্য ১০০ আসনে সরাসরি ভোট আয়োজনের প্রস্তাব প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে আবু তাহের জানান, “আমাদের দলের কোনো আপত্তি নেই নারীদের সরাসরি ভোটে আসন নির্ধারণের বিষয়ে।”
আজকের সংলাপে জামায়াতের প্রতিনিধি দলে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ছাড়াও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান ও হামিদুর রহমান আজাদ।
প্রসঙ্গত, গতকাল মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় দফার আলোচনায় জামায়াত অংশ নেয়নি। ওই অনুপস্থিতি ছিল মূলত ড. ইউনূসের পক্ষপাতমূলক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ। তবে আজকের সংলাপে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ইঙ্গিত দেয়, রাজনৈতিক আলোচনা পুনরায় চালু রাখার জন্য জামায়াত এখনও আগ্রহী।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ফোনকল ও প্রতিক্রিয়া হয়তো কিছুটা স্বস্তি এনে দেবে সংলাপ প্রক্রিয়ায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে তৈরি সরকার যদি বিশ্বাসযোগ্যতা ফিরিয়ে আনতে ব্যর্থ হয়, তাহলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা আরও ঘনীভূত হতে পারে।
এই ঘটনাপ্রবাহ আবারও প্রমাণ করে, বর্তমানে বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংলাপ শুধু বক্তব্যের বিষয় নয়—বরং একটি কৌশলী খেলা, যেখানে আস্থা, প্রতিশ্রুতি ও সাম্যতা বড় ভূমিকা রাখে।