close

কমেন্ট করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্ব প্যারিসের ; ফাইনালের আদ্যোপান্ত

Mehedi Hasan avatar   
Mehedi Hasan
****

ইউরোপ শ্রেষ্ঠত্ব হওয়ার, যার জন্য কতো চেষ্টা ও প্রচেষ্টা। আগে যা করতে পারেনি ফরাসির এই ক্লাবটি, তা এবার করে দেখালেন তারা। মেসি - নেইমার - এমবাপ্পের পিএসজি যা করতে পারেনি, ডেম্বেলে হাকিমির পিএসজি তা করে দেখালেন। মিলান কে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগে জিতে নিলো ফ্রান্সের এই বিখ্যাত ক্লাবটি।

চলতি মৌসুম শুরুর আগেই পিএসজির সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে মাদ্রিদে যোগ দেয় কিলিয়ান এমবাপ্পে। এছাড়া আরো অনেকেই ক্লাব ছেড়েছেন। দায়িত্ব দেওয়া হয় লুইস এনরিক'কে। একঝাক তরুণ আর মেগাস্টার ছাড়া দৃষ্টিনন্দন ফুটবল উপহার দেয় এই মাস্টারমাইন্ড। পিএসজি সমর্থকদের স্বপ্ন অবশেষে পূরণ করলেন, চ্যাম্পিয়নস লিগের পাশাপাশি জিতে নিলেন বিখ্যাত সেই ট্রেবল। এদিকে মিউনিখ ও যেনো তাদের পুরনো ঐতিহ্য ধরে রাখলো, ইউরোপ পেলো আরো একটি নতুন চ্যাম্পিয়ন দল।

শনিবার (৩১ মে) মিউনিখের অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করে ইউরোপ সেরা হয়েছে পিএসজি। জোড়া গোল ও গোল সহায়তা করে রেকর্ডবুকে নিজের নাম লেখান১৯ বছর বয়সী ফরসি মিডফিল্ডার ডিজায়ের দুয়ে। বাকি ৩ টি গোল করেন আশরাফ হাকিমি, খিচা কাভারাৎস্খেলিয়া ও মায়ুলুও।

ম্যাচের প্রথম মিনিট থেকেই একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করেছে পিএসজি। এনরিকের এই দলের সাথে ইন্টার মিলান যেনো কোনো পাত্তাই পায়নি। প্যারিসিয়ান সবমিলিয়ে ২৩ শটের মধ্যে ৮ টি শট অন টার্গেট রেখেছে, অন্যদিকে ইনজাঘির শিষ্যরা ৮ টি শট খেলে মাত্র ২ টি অন টার্গেট রাখতে পেরেছে।

ম্যাচের ১২ মিনিটে ইন্টার মিলানে খেলে আসা মরোক্কোর আশারাফ হাকিমি লিড এনে দেয় পিএসজিকে। দারুণ এক বল-টাকে ভিতিনিয়া ইন্টারের ডিফেন্স লাইন ভেদ করে পাস দেন ডিজায়ের দুয়েকে। সেই বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান পাঁশে দাঁড়ানো হাকিমিকে দিলে সহজেই বলটাকে গোলে রুপান্তর করেন। গোল করার পর তাকে উদযাপন করতে দেখা যায়নি। নিজের সাবেক ক্লাবের সমর্থকদের উদ্দেশে বরং করজোড়ে ক্ষমা চেয়েছেন। নেরাজ্জুরি সমর্থকরাও তাকে হাততালি দিয়ে স্বাগত জানান।

সবকিছু ছাপিয়ে এদিন প্রথমার্ধের নায়ক ডিজায়ের দুয়ে। ১৯ বছর বয়সী এই ফরোর্য়াড চলতি মৌসুম জুড়ে দারুণ ফুটবল উপহার দিয়েছে, তবে ফাইনালে এসে যেনো সবকিছু উজাড় করে দিলেন। প্রথমে হাকিমিকে দিয়ে গোল করানোর পর দ্বিতীয় গোলটি নিজেই করেছেন।

পিএসজির কাছে ইন্টারের আক্রমণ বাধা হয় ইন্টারের ডিফেন্সে। বারবার চেষ্টা করার পরেও বারবার হল হারাচ্ছিল। বল হারানোর খেসারত দিয়েই দ্বিতীয় গোলটি হজম করে ইনজাগির শিষ্যরা। ইন্টার মিলান আক্রমণে গেলেও পিএসজির কর্নার লাইনে বল হারায় তারা। এই সেন্টারব্যাক দ্রুত পাস বাড়িয়ে কাউন্টার অ্যাটাকের শুরু করেন। ডেম্বেলে দুয়ের বাঁয়ে সরে যান এবং পাস বাড়ান। দুয়ের ভলি ডিমার্কোর পায়ে লেগে দিক বদলে জালে জড়ায়। যার ফলে মাত্র ১৯ বছর বয়সেই চ্যাম্পিয়নস লিগে গোল ও অ্যাসিস্ট করার রেকর্ড গড়েন তিনি।

প্রথমার্ধে পাত্তা না পাওয়া ইন্টার মিলান দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা হলেও ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে পিএসজি বরাবরের মতো আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে। বেশ কয়েকটি সুযোগ তৈরি করলেও কঠিন পরিক্ষার মধ্যে ফেলতে পারেনি ইন্টার মিলান। ৬৩ মিনিটে উল্টো তারা আরো একটি গোল হজম করে। এইবার ও গোল করেন দুয়ে। দেম্বেলের ব্যাকহিলের ফ্লিক বল টাকে  দারুণ গতিতে ওপরে নিয়ে ওঠেন ভিতিনিয়া। এরপর তিনি বল বাড়ান বক্সে জায়গা করে নেয়া দুয়েকে। প্রথমে ইন্টারে গোলকিপার সোমারের পায়ের পজিশন দেখে নিয়ে নিচু শটে ডান কোনা দিয়ে বল জালে পাঠান এই ফরাসি।

এইবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ আসরে সর্বমোট ১৬ ম্যাচ খেলে ৫ গোল ও অ্যাসিস্ট করলেন এই ১৯ বছর বয়সী। সব মিলিয়ে এই মৌসুমে ৫৪ ম্যাচে ১৫ গোল ও ১৬ অ্যাসিস্ট করলেন দুয়ে। সেই গোলের পর অবশ্য জার্সি খুলে উদযাপন করেন তিনি। যার কারণে হলুদ কার্ড দেখতে হয় দুয়েকে। এরপরেই এনরিকে তাকে মাঠ থেকে তুলে নেন

৭৩ মিনিটে স্কোরশিটে নাম তোলেন কাভারাৎস্খেলিয়া। ম্যাচ জুড়ে আধিপত্য ধরে রাখা তিনি ডেম্বেলের বাড়ানো পাস দৌড়ে ইন্টারের রক্ষণ চুরমার করে বল জালে পাঠান। এই গোলের পরই মোটামুটি হাল ছেড়ে দেয় ইন্টার মিলান। সুযোগ কাজে লাগিয়ে ব্যবধান বাড়ায় পিএসজি। ৮৪ মিনিটে ফাবিয়ান রুইজের বদলি হিসেবে নামার দুই মিনিটের মাথায় স্কোরশিটে নাম তুলেছেন সেনি মায়ুলুও। ব্র্যাডলি বারকোলার সঙ্গে ওয়ান-টু খেলে বক্সের বাঁ দিকে জায়গা খুঁজে নেন এই ১৯ বছর বয়সী। এরপর বল জালে পাঠান।

৮৪ মিনিটের ম্যাচের স্কোর ৫-০। ১৯৬১-৬২ মৌসুমে বেনফিকার বিপক্ষে রিয়াল মাদ্রিদের (৫-৩) পর এই প্রথম কোনো দল (ইন্টার মিলান) ফাইনালে ৫ গোল হজম করলো।

পিএসজির ক্লাব ইতিহাসের প্রথম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এটি। পিএসজি যেমন তাদের প্রথম ট্রেবল উদযাপন করেন, তেমনি লুইস এনরিকে তার কোচিং ক্যারিয়ারে দ্বিতীয়বার ট্রেবল জয়ের স্বাদ পেলেন। প্রথমটি পেয়েছিলেন ২০১৪-১৫ মৌসুমে বার্সা থাকাকালীন। তার অধীনেই বার্সা শেষবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতে। পেপ গার্দিওলার পর দ্বিতীয় কোচ হিসেবে দুইবার ট্রেবল জয়ের কীর্তি গড়লেন তিনি। অন্যদিকে পুড়া কপাল, যেখানে কয়েক মাস আগেও ট্রেবল জয়ের স্বপ্ন দেখেছিলো তারা, আজ তারা ট্রফিশূণ্য। সিমনে ইনজাগির অধীনে শেষ তিন মৌসুমে দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে হারের মুখ দেখতে হলো নেরাজ্জুরিদের। এক মৌসুম আগে ম্যানচেস্টার সিটির কাছে ফাইনালে হেরেছিল ইন্টার।

Aucun commentaire trouvé