ইউনুসের পদত্যাগ নয়, ব্যর্থ রাজনৈতিক পরিকল্পনার ভাঙন

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
সাবেক নোবেলজয়ী অধ্যাপক ইউনুসের ঘিরে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র! বাতেন মোহাম্মদ জানালেন, ‘মাইনাস টু’ ফর্মুলা ভেঙে পড়েছে, ক্ষমতার লোভে বিভ্রান্তির খেলায় লিপ্ত এক গোষ্ঠী। ফাঁস করলেন অভ্যন্তরীণ গেমপ্ল্যান—জানুন চম..

ইউনুসকে ঘিরে ষড়যন্ত্র, নয় কোনো পদত্যাগ: রাজনীতির গভীরে শক্তিশালী গোষ্ঠীর ব্যর্থ পরিকল্পনার খোলাসা করলেন বাতেন মোহাম্মদ

বাংলাদেশের রাজনীতির উত্তাল সময়ের পটভূমিতে একটি গভীর ষড়যন্ত্র, একটি ব্যর্থ ‘প্ল্যান বি’ আর একটি ভেঙে পড়া ফিকশনাল পরিকল্পনার মুখোশ খুলে দিলেন সাংবাদিক ও বিশ্লেষক বাতেন মোহাম্মদ। তিনি বলেন, অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের বিষয়টি এখন মূল ইস্যু নয়, বরং একটি উচ্চাভিলাষী ক্ষমতালোভী গোষ্ঠী তাঁকে ব্যবহার করে নিজেদের অপকৌশলের বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল।

সম্প্রতি ফেসবুকে দেওয়া একটি বিস্তারিত পোস্টে বাতেন মোহাম্মদ সরাসরি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ইউনুসের চারপাশে ঘূর্ণায়মান রাজনৈতিক নাটক আসলে এক প্রকার চক্রান্ত, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে 'মাইনাস টু' নামক বহুল আলোচিত পরিকল্পনার ছায়া। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল বিএনপিকে রাজনৈতিকভাবে ধ্বংস করে ফেলা—কখনও আওয়ামী লীগের অনুগামী হিসেবে, কখনও ভারতের দালাল হিসেবে চিত্রিত করে জনমানসে বিভ্রান্তি ছড়ানো।

বাতেন স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য ছিল নির্বাচনকে দীর্ঘায়িত করে ক্ষমতায় থাকা নিশ্চিত করা। কিন্তু বিএনপির রাজপথে শক্ত অবস্থান এবং দৃঢ় আন্দোলনের ফলে পুরো কৌশলটাই ভেঙে পড়ে।”

তিনি আরও দাবি করেন, ইসলামপন্থীদের ব্যবহার করে সরকারঘনিষ্ঠ মহল পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করতে চেয়েছিল। তবে বাস্তবে দেখা গেছে, এসব গোষ্ঠী আদর্শিকভাবে নয় বরং ব্যবহারিকভাবে ক্ষমতাসমর্থক, এবং সংকটকালীন সময়ে তারা কখনোই কার্যকর ভূমিকা রাখে না। “তারা মাঠে থাকে না, শুধু ব্যাকআপ দেয়,” বলেন বাতেন।

বিএনপির বিপরীতে ‘নৈরাজ্য সৃষ্টি’র অভিযোগ কেবলমাত্র একটি ‘ব্লেম গেম’—যার উদ্দেশ্য জনগণের চোখে আন্দোলনের যৌক্তিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। বাতেন বলেন, “এটি ব্যর্থতা ঢাকার একটি পুরনো ও অচল কৌশল। সরকার যদি সত্যিকারের গণতন্ত্রে বিশ্বাস করতো, তাহলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ফাঁদ পাতার চেষ্টা করতো না।”

তিনি ইউনুস প্রসঙ্গে বলেন, “যদি তিনি এখনো বুঝতে না পারেন যে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে ঘোলা খাওয়ানো হচ্ছে, তবে সেটি অত্যন্ত দুঃখজনক।” ইউনুসের আবেগনির্ভর পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়েও বাতেন প্রশ্ন তোলেন—“রাজনীতির প্রাথমিক অক্ষর না জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া বিপজ্জনক।”

সরকারের অভ্যন্তরে থাকা উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহলের ব্যর্থতা নিয়ে তিনি বলেন, “তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়েছে এবং এখন সেই হতাশা থেকেই নতুন নতুন বিভ্রান্তিমূলক কৌশল নেওয়া হচ্ছে।” ছাত্র উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সাম্প্রতিক ফেসবুক পোস্টগুলোকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “তাঁর মধ্যে এক ধরনের ‘আমি-ই গণতন্ত্র রক্ষাকারী’ ভাব লক্ষ করা যাচ্ছে—যেটি ফ্যাসিবাদের সূচনা।”

বাতেন আরও জানান, বিএনপি যাদের পদত্যাগ দাবি করছে, যেমন ছাত্র উপদেষ্টা ও খলিলুর রহমান, তারা নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকতে পারেন। আর মাহফুজের পদত্যাগের দাবি তিনি ‘কোলেটারাল ড্যামেজ’ হিসেবে দেখছেন—কারণ মাহফুজ সম্ভবত সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি, বরং পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা হিসেবে বাতেন বলেন, “এখন সময় উভয় পক্ষের জন্য ‘ডি-এসকালেশন’-এর। যদি এই মুহূর্তে দেশে নির্বাচন ছাড়া শাসনতান্ত্রিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়, তাহলে সেটা আওয়ামী যুগের চেয়েও ভয়ানক পরিস্থিতির জন্ম দিতে পারে।” তিনি ব্যক্তিগত এবং গোষ্ঠীগত স্বার্থ ভুলে গিয়ে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে সম্মিলিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

 

এই লেখায় বাতেন মোহাম্মদ কেবল ইউনুসকে ঘিরে রাজনৈতিক নাটকের বিশ্লেষণই করেননি, বরং বাংলাদেশের সমসাময়িক রাজনৈতিক অবস্থা ও ভবিষ্যতের ঝুঁকি সম্পর্কে এক গভীর ও সাহসী বার্তা দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট—বিপথে যাওয়া গোষ্ঠীগুলোকে চিহ্নিত না করে, আবেগে নয় বরং দূরদর্শী রাজনৈতিক চিন্তায় দেশের ভবিষ্যৎ গড়তে হবে।

Nema komentara