close
লাইক দিন পয়েন্ট জিতুন!
ইতালি যাওয়ার পথে প্রাণ হারানো বাংলাদেশীদের সংখ্যা বাড়ছে দিন দিন!
ইতালি যাওয়ার স্বপ্নে মৃত্যুর পথ বেছে নিচ্ছে বাংলাদেশীরা। ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভূমধ্যসাগরের মাঝপথে ডুবে যায় এক নৌকা, আর ২৩ জন বাংলাদেশী প্রাণ হারায়। এর ঠিক তিন মাস আগে ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩-এ লিবিয়ার উপকূলে একইভাবে নৌকা ডুবে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এমন মর্মান্তিক ঘটনা সত্ত্বেও বাংলাদেশীরা থেমে নেই। উন্নত জীবনের সন্ধানে তারা অবৈধ পথে লিবিয়া পাড়ি দিয়ে ভূমধ্যসাগরের বিপদজনক জলপথে কষ্টকর যাত্রা অব্যাহত রেখেছেন।
এত ঝুঁকি কেন?
এ প্রশ্নের উত্তর হলো- অভাবগ্রস্ত জীবন ও কাজের সন্ধানে ইতালিতে পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা। বৈধভাবে ইতালি যাওয়ার কোনো উপায় না পেয়ে আন্তর্জাতিক পাচারকারীদের সহায়তায় তারা অবৈধ পথে দেশটির দিকে যাত্রা শুরু করেন। পাচারকারীরা বাংলাদেশী যুবকদের সঙ্গী করে এসব মারাত্মক পথ পাড়ি দিচ্ছে। জানা গেছে, তারা বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকার বিনিময়ে দুবাই, তুরস্ক কিংবা মিশর পাঠানো হয়, এবং সেখান থেকে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর, সমুদ্রপথে ইতালির উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
বৈধভাবে যাওয়ার উপায় নেই!
এই যাত্রা কি সহজ? একদমই না। ভূমধ্যসাগরের পথে যাত্রীরা ছোট বা মাঝারি আকারের নৌকা ব্যবহার করে। অনেক সময় তারা নৌকার পাটাতনের নিচে চেপে দম বন্ধ হয়ে মারা যান অথবা অতিরিক্ত ঠান্ডায় জীবন হারান। তারপরও মৃত্যুর মুখোমুখি হয়ে জীবন ও অর্থের সবটুকু খরচ করে অনেকেই ইতালি পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
বাংলাদেশের যুবকদের একটি বিপদজনক স্বপ্ন
শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুর, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, সুনামগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ইতালির উদ্দেশ্যে প্রস্থানের খবর প্রতিনিয়ত উঠে আসছে। ইতালির শ্রম ও সামাজিক পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ২০২৩ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ লাখ ৫০ হাজার ৬৫২ জন বাংলাদেশী ইতালিতে বৈধভাবে অবস্থান করছেন। তবে, বৈধভাবে বসবাসকারী এই সংখ্যার তুলনায় অবৈধভাবে ৫০,০০০ এরও বেশি বাংলাদেশী ইতালিতে অবস্থান করছেন। এবং, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বর্ডার এজেন্সি ফ্রন্টেক্সের রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৪ সালে ৮,৬৬৭ জন বাংলাদেশী অবৈধভাবে ইউরোপে প্রবেশ করেছেন, যার মধ্যে বেশিরভাগই কেন্দ্রীয় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছেন।
দেশের উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক চাপ
এদিকে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম (International Organization for Migration) জানিয়েছে যে, ২০২৪ সালে ২১,৭০০ অবৈধ অভিবাসীকে ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করেছে লিবিয়ার কোস্টগার্ড, এর মধ্যে ১,৫০০ নারী এবং ৭০০ অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিল। এ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন লিবিয়ায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল আব্দুল হাসনাত মোহাম্মদ খাইরুল বাশার। তিনি বলেন, "বাংলাদেশ সরকারের কাছে মানব পাচারকারী ও দালালদের তালিকা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিলে এই মৃত্যুর মিছিল থামানো সম্ভব হবে।"
এছাড়া, ইতালির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ইতালিতে ৫০,০০০ এরও বেশি বাংলাদেশী অবৈধভাবে বসবাস করছেন। তবে, কিছু বাংলাদেশী পাসপোর্টের তথ্য সংশোধন করে বৈধভাবে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। এটি চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
সমস্যার সুরাহা কী?
এত মৃত্যুর মিছিল এবং অবৈধ অভিবাসনের ঝুঁকি কি শেষ হবে? এই প্রশ্ন এখনই সমাধান করা কঠিন, তবে কঠোর আইন প্রয়োগ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা একমাত্র উপায় হতে পারে এসব প্রাণঘাতী পাচারের পথ বন্ধ করতে।
No comments found