ইসরায়েলের দিকে ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পড়ল সৌদিতে, উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্য
মধ্যপ্রাচ্যে আবারও বাড়ছে উত্তেজনা। ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহী গোষ্ঠী যেভাবে ইসরায়েলের দিকে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ছে, তা এখন নতুন মাত্রা নিচ্ছে। বুধবার (৯ এপ্রিল) রাতে হুতিদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের তেলআবিব লক্ষ্য করে ছোড়া হলেও তা সৌদি আরবের অভ্যন্তরে গিয়ে পড়ে এবং সেখানে ভূপাতিত হয়।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)-এর বরাত দিয়ে ‘দ্য টাইমস অব ইসরায়েল’ জানায়, ক্ষেপণাস্ত্রটি ইসরায়েল পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনি এবং কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবরও পাওয়া যায়নি। এমনকি আইডিএফ কোনো ধরনের সতর্কতামূলক সাইরেন বাজানোর প্রয়োজনও অনুভব করেনি, কারণ এটি ইসরায়েলের জন্য কার্যত হুমকি তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সেনাবাহিনী উৎক্ষেপণের বিষয়টি দ্রুত শনাক্ত করলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় বড় ধরণের প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। তবে এটি স্পষ্ট যে হুতিদের মূল লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের অভ্যন্তরে সরাসরি আঘাত হানা।
১৮ মার্চের পর থেকে পাল্টে গেছে যুদ্ধের ধরণ
গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতির ভেঙে আবারও হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করে। এই অভিযান শুরুর পর থেকেই ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলের প্রতি তাদের আক্রমণ আরও জোরদার করে। তারা ইতোমধ্যে ১৮টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং দুটি ড্রোন ইসরায়েলের দিকে ছুড়েছে।
আইডিএফ জানায়, এদের মধ্যে মাত্র ১০টি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের সীমান্তে পৌঁছে সাইরেন বাজাতে সক্ষম হয়েছে। সেসব হামলার ক্ষেত্রেও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরভাবে কাজ করেছে এবং ক্ষেপণাস্ত্রগুলো আকাশেই ধ্বংস করে দিয়েছে। অন্যদিকে, বেশ কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন উৎক্ষেপণের পরপরই নিজের গন্তব্য না পেয়ে ভূপাতিত হয়ে পড়ে, যা প্রতিপক্ষের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
সৌদি আরবের জন্য হুতিরা একটি দীর্ঘমেয়াদি হুমকি
হুতিদের এই ধরণের আক্রমণ সৌদি আরবের জন্যও বড় ধরনের নিরাপত্তা হুমকি তৈরি করছে। কারণ, সৌদি আরব বহুদিন ধরেই হুতিদের নিজেদের জন্য ‘আঞ্চলিক নিরাপত্তার প্রধান চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে বিবেচনা করে আসছে। হুতিদের উত্থানে সৌদি আরব আশঙ্কা করে, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতা ও সীমান্তবর্তী নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি।
ইরান এই হুতিদের মূল পৃষ্ঠপোষক। ২০১৪ সালে হুতিরা ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে নেয়, যার ফলে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদরাব্বু মনসুর হাদি দেশত্যাগে বাধ্য হন। এর মধ্য দিয়েই ইয়েমেনে গৃহযুদ্ধের সূত্রপাত ঘটে।
২০১৫ সালে সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি সামরিক জোট ইয়েমেনে হুতিদের বিরুদ্ধে হামলা শুরু করে। তবে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও সৌদি নেতৃত্বাধীন ওই জোট হুতিদের সামরিক শক্তিকে দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে।
ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ে ইয়েমেন
এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে ইয়েমেন পরিণত হয়েছে এক বিপর্যস্ত মানবিক অঞ্চলে। হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, লাখ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন, এবং অনাহার, চিকিৎসাহীনতা ও অব্যবস্থাপনার কারণে দেশটিতে এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়েছে।
ইসরায়েল, হুতি বিদ্রোহী, ইরান ও সৌদি আরব—এই চারটি শক্তির মধ্যকার সংঘাত এখন কেবল একটি আঞ্চলিক বিষয় নয়, বরং তা মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে একটি বড় ধরনের অস্থিতিশীলতা তৈরি করছে। হুতিদের ইসরায়েলমুখী ক্ষেপণাস্ত্র সৌদি আরবে বিস্ফোরণের ঘটনাটি এই সংঘাতের জটিলতা আরও বাড়িয়ে তুলেছে। প্রশ্ন উঠছে, সামনে আরও কী ভয়াবহ কিছু অপেক্ষা করছে?