ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কো-অপের ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত, বন্ধ হচ্ছে সব ইসরায়েলি পণ্যের বিক্রি
গাজার ওপর ইসরায়েলের চলমান বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবার গর্জে উঠেছে যুক্তরাজ্যের অন্যতম বৃহৎ খুচরা বিক্রয় প্রতিষ্ঠান কো-অপ। সাহসী এক সিদ্ধান্তে তারা জানিয়ে দিয়েছে—আর নয়, ইসরায়েলের কোনো পণ্যই থাকবে না তাদের দোকানে।
মঙ্গলবার (২০ মে) সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট মনিটরের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, গত শনিবার (১৭ মে) কো-অপের বার্ষিক সাধারণ সভায় পেশ করা হয় ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের একটি প্রস্তাব। এ প্রস্তাবে ৭৩% কর্মী সমর্থন জানিয়ে ভোট দেন। বিশ্লেষকদের মতে, এমন বিপুল সমর্থন কো-অপের ইতিহাসেই বিরল, যা প্রতিষ্ঠানটির নৈতিক অবস্থানের শক্ত বার্তা বহন করে।
কো-অপের সদস্যরা একে কেবল একটি ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নয়, বরং মানবিকতা ও জবাবদিহিতার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করছেন। গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে তারা মন্তব্য করেন।
কো-অপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চলতি গ্রীষ্মের শেষ নাগাদ একটি চূড়ান্ত মূল্যায়ন প্রক্রিয়া শেষ করা হবে। এই প্রক্রিয়া শেষ হলেই, একে একে ইসরায়েলের সব পণ্য তাদের সুপারমার্কেট চেইন থেকে সরিয়ে ফেলা হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু একটি প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নয়; বরং ব্রিটেনজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে যে ইসরায়েলবিরোধী অনুভূতি তৈরি হয়েছে, তারই প্রতিফলন। কো-অপ এমন একটি সময় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহতের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিদিনই। সাধারণ মানুষ, শিশু ও নারী—কারো প্রতি কোনো করুণা দেখাচ্ছে না দখলদার বাহিনী।
উল্লেখ্য, কো-অপ ব্রিটেনে সবসময়ই একটি নৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত। ২০০৭ সালেই তারা প্রথমবারের মতো ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি স্থাপনের প্রতিবাদে দেশটির পণ্য বয়কট করেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এবার আরও কঠোর অবস্থান নিয়েছে তারা।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, কো-অপের এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাজ্যের অন্যান্য খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপরও চাপ সৃষ্টি করবে। তারা চাইলে ব্যবসার চাইতেও মানবিকতা ও ন্যায়বিচারের পক্ষে অবস্থান নিতে পারে—এই বার্তা এখন স্পষ্ট।
বিশ্বব্যাপী ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলনের জন্য এটি একটি বড় বিজয় হিসেবেই দেখা হচ্ছে। এমন সময় এই ঘোষণা এসেছে, যখন বিশ্বের বহু অঞ্চলে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বয়কট আন্দোলন জোরদার হচ্ছে। ব্রিটেনের রাস্তায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে—সবখানেই দাবি উঠছে, দখলদার রাষ্ট্রের পণ্য বয়কট করো।
এই সিদ্ধান্ত শুধু কো-অপের ব্যবসায়িক লাভ-ক্ষতির হিসেবই নয়, বরং তা ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেবে বলে আশা করছেন অনেকে। মানবতা, নৈতিকতা আর সচেতনতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গড়লো কো-অপ।
ইসরায়েলি পণ্য বয়কটের এমন সাহসী পদক্ষেপ শুধু ব্রিটেন নয়, গোটা বিশ্বের খুচরা বাজারে নড়েচড়ে বসার মতো এক অভূতপূর্ব উদাহরণ। কো-অপ দেখিয়ে দিল, ব্যবসার বাইরেও আছে দায়িত্ববোধ।