ইসরায়েলের ওপর নিষেধাজ্ঞার দাবিতে যুক্তরাজ্যে ৮০০ বিচারক-আইনজীবীর চিঠি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
গাজায় গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধের আশঙ্কায় ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে যুক্তরাজ্যের ৮০০ জন বিচারক, আইনজীবী ও অধ্যাপক দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক আইনের বরেণ্য ব্যক্তিদের ..

গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতকে ঘিরে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার আশঙ্কা ক্রমেই জোরালো হচ্ছে। সেই আশঙ্কা থেকেই এবার সরব হয়েছেন যুক্তরাজ্যের আইনি ও শিক্ষাবিদ মহল। সোমবার, ২৬ মে — ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের কাছে একটি খোলা চিঠি পাঠিয়েছেন দেশটির শীর্ষ পর্যায়ের ৮০০-এর বেশি বিচারক, আইনজীবী ও বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপক। তাদের দাবির কেন্দ্রে রয়েছে, অবিলম্বে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে।

চিঠিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়, গাজায় যে সহিংসতা চলছে, তা শুধুমাত্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় — বরং তা গণহত্যা সংঘটনের আশঙ্কাকে বাস্তবে রূপ দিতে পারে। এই চিঠি আন্তর্জাতিক মহলে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বিশেষ গুরুত্বের বিষয় হলো, এ চিঠিতে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এবং আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতিরাও। একইসঙ্গে চিঠিতে আন্তর্জাতিক আইনজগতের বহু খ্যাতিমান ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকায় এটি শুধুমাত্র নৈতিক আবেদন নয়, বরং এক ধরনের আইনি ও কূটনৈতিক চাপও সৃষ্টি করছে।

চিঠিতে তুলে ধরা হয় ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচের সাম্প্রতিক এক বক্তব্য, যেখানে তিনি গাজার পুরো ভূখণ্ড দখল, "শত্রুমুক্ত" করা এবং সেখানে স্থায়ীভাবে থাকার ঘোষণা দিয়েছেন। স্বাক্ষরকারীরা এই বক্তব্যকে গাজার জনগণের অস্তিত্বের ওপর সরাসরি হুমকি হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন।

তাদের মতে, এই ধরণের উসকানিমূলক বক্তব্য এবং সামরিক কার্যক্রম শুধুমাত্র আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন নয়, বরং তা মানব সভ্যতার জন্য হুমকি স্বরূপ। চিঠিতে বলা হয়, গাজায় যে মানবিক বিপর্যয় চলছে, তা বন্ধ করতে হলে জরুরি ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

তারা সরকারের কাছে আহ্বান জানান, অবিলম্বে একটি স্থায়ী, নিঃশর্ত ও ব্যাপক অস্ত্রবিরতি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি গাজার মানুষদের জন্য বাধাহীন, জরুরি মানবিক সহায়তা প্রবাহ নিশ্চিত করারও আহ্বান জানানো হয়।

এই চিঠির প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ রাজনৈতিক অঙ্গনেও আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যেই জানা গেছে, গত সপ্তাহে যুক্তরাজ্য ইসরায়েলের সঙ্গে চলমান একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে। এটি অনেকেই দেখছেন একটি কৌশলগত রাজনৈতিক পদক্ষেপ হিসেবে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চিঠি কেবল যুক্তরাজ্যের ভেতরেই নয়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে চলমান নিন্দা ও সমালোচনাকে আরও শক্তিশালী করবে। বিশেষ করে যখন গণমাধ্যমে গাজার মানবিক বিপর্যয় নিয়ে প্রতিবেদন প্রতিনিয়ত সামনে আসছে।

উল্লেখ্য, গাজায় চলমান সংঘাতে এখন পর্যন্ত হাজার হাজার বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে, যার মধ্যে শিশুর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। অবরোধ, বোমা হামলা, ও খাদ্য-চিকিৎসার সংকটে জর্জরিত এ অঞ্চলে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোও প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

চিঠির শেষাংশে এক কঠোর বার্তা দিয়ে বলা হয়, এই নৃশংসতা বন্ধ করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি এখনই পদক্ষেপ না নেয়, তাহলে ইতিহাসে এ সময়টিকে এক ভয়াবহ ব্যর্থতা হিসেবে মনে রাখা হবে।

No comments found