close

ভিডিও আপলোড করুন পয়েন্ট জিতুন!

ইসরায়েলের ঘুম হারাম করে ইরানের প্রেমে পড়লেন ট্রাম্প

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য কৌশলে নাটকীয় পরিবর্তন! ইসরায়েলের বদলে ইরানকে ঘিরে ঘুরছে ট্রাম্প প্রশাসনের কূটনৈতিক ঘড়ির কাঁটা। বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরানকে কাছে টেনে যুক্তরাষ্ট্র চীন-রাশিয়ার প্রভাব কমাতে চায়....

মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে নীরব এক বিপ্লব শুরু হয়ে গেছে। কয়েক দশকের বৈরিতাকে পাশ কাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এখন ধীরে ধীরে ইরানের দিকে ঝুঁকছে, আর সেই জোটবদলের আঁচ পড়েছে এক সময়ের ঘনিষ্ঠ মিত্র ইসরায়েলের ঘরে। ট্রাম্প প্রশাসনের সাম্প্রতিক তৎপরতা বিশ্লেষকদের চোখে এক নতুন পর্বের সূচনা, যা শুধু তিন দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নয়, বরং গোটা মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যত কৌশলগত ভারসাম্যকে প্রভাবিত করতে পারে।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বরাবরই ছিল দৃষ্টান্তমূলক শত্রুতার। ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লব ও মার্কিন দূতাবাস দখলের ঘটনার পর দুই দেশের মধ্যে বৈরিতা গভীরতর হয়। এরপর বহু বছর পেরিয়ে ২০১৫ সালে বারাক ওবামা প্রশাসনের অধীনে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষর হলেও ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে সেটিকে ছিন্ন করেন। ফলে উত্তেজনা আবার তুঙ্গে ওঠে। তবে ২০২৫ সালে এসে ট্রাম্প প্রশাসন নরম মনোভাব দেখাতে শুরু করেছে—যা কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের চোখে বড় একটি মোড়।

সম্প্রতি ইসরায়েলের একপাক্ষিক হামলার জবাবে ইরান শতাধিক ড্রোন ও ব্যালিস্টিক মিসাইল নিক্ষেপ করে। ইসরায়েলও পাল্টা আঘাত করে ইরানের কিছু পরমাণু স্থাপনায়। এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে নিরপেক্ষ থাকলেও পরে ইরানে ‘টার্গেটেড স্ট্রাইক’ করে—যা দেখে সামরিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি “ভারসাম্য রক্ষার খেলায়” যুক্তরাষ্ট্রের এক কৌশলী চাল।

তবে এই সামরিক পদক্ষেপের খরচও ছিল বিশাল। কেবল ইন্টারসেপ্টর ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে খরচ করতে হয়েছে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এই মোটা অঙ্কের অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র যেমন সামরিক উপস্থিতি দেখিয়েছে, তেমনই ইসরায়েলকে রক্ষা করলেও পুরোপুরি পক্ষপাতদুষ্ট হয়নি—যা ইসরায়েলের জন্য এক অস্বস্তিকর বার্তা।

বিশ্ব গণমাধ্যমের নানা সূত্র ও কূটনৈতিক রিপোর্ট অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এখন ইরানের সঙ্গে চুপিচুপি আলোচনায় বসছে—ওমান, কাতার ও সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে। আলোচনার তিনটি মূল বিষয়:

  1. পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করা

  2. আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা

  3. নিষেধাজ্ঞা আংশিক শিথিল করা

এমনকি কিছু আন্তর্জাতিক সংস্থা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র ইরানের জন্য ৩০ বিলিয়ন ডলারের শান্তিপূর্ণ পরমাণু বিনিয়োগ প্রকল্পও বিবেচনা করছে, যদিও ট্রাম্প সরকার তা প্রকাশ্যে অস্বীকার করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই নতুন কৌশলের অন্যতম কারণ হলো—ইরানের বিশাল প্রাকৃতিক সম্পদের ভাণ্ডার। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস রিজার্ভ, লিথিয়াম, ইউরেনিয়াম, কপার—যা আধুনিক প্রযুক্তি ও গ্রিন এনার্জির জন্য অপরিহার্য। ট্রাম্প প্রশাসন বুঝে গেছে, এ সম্পদ চীন কিংবা রাশিয়ার হাতে গেলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভয়ানক কৌশলগত বিপদ হয়ে উঠবে।

ফলে ইরানকে নিজেদের বলয়ের মধ্যে রেখে শক্তি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টাই এখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন কৌশল—‘Containment by Engagement’। অর্থাৎ সরাসরি শত্রুতা না করে, কৌশলে ইরানকে বন্ধুতে পরিণত করে নজরে রাখা।

ইসরায়েল বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য মিত্র ছিল। কিন্তু গাজায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুর দায়ে এখন পশ্চিমা বিশ্বেও ইসরায়েলের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। যুক্তরাষ্ট্রও চাপে পড়ে কিছু অস্ত্র সরবরাহ স্থগিত করেছে। এমনকি নেতানিয়াহুর সঙ্গে বাইডেন বা ট্রাম্পের বৈঠক একাধিকবার বাতিল হয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসন ইসরায়েলকে 'উগ্র জাতীয়তাবাদী' বলেও উল্লেখ করেছে, যা কখনও ভাবা যায়নি। এটা ইঙ্গিত করে যে, যুক্তরাষ্ট্র এখন আর ইসরায়েলের পক্ষে নিঃশর্ত সমর্থনে আগ্রহী নয়।

গালফ অঞ্চলের রাজনীতিতেও পরিবর্তন এসেছে। ইরান ও সৌদি আরব এখন কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পথে। আরব আমিরাত, কুয়েত এমনকি কাতার পর্যন্ত এখন ইরানের সঙ্গে সীমিত বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ছে। এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারছে—ইরানকে একঘরে রাখলে সেটা চীন-রাশিয়ার পক্ষে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্র যদি ইরানকে কৌশলগত বন্ধুর ভূমিকায় রাখতে পারে, তবে মধ্যপ্রাচ্যে চীন ও রাশিয়ার প্রভাব কমবে। তেল সরবরাহ নিরাপদ থাকবে। অন্যদিকে ইসরায়েল কিছুটা চাপে থাকবে, কারণ তাদের প্রধান শত্রু ইরানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠতা বাড়ছে।

তবে ইরানের কট্টরপন্থী রাজনীতিকেরা এই ঘনিষ্ঠতাকে সহজভাবে নেবে না। তারা এখনও যুক্তরাষ্ট্রকে ‘বিশ্ব শয়তান’ বলে চিহ্নিত করে। তেমনি ইসরায়েলও হয়তো বিকল্প সামরিক ও কূটনৈতিক পথ খুঁজবে।

এর মাঝেই ট্রাম্প নেদারল্যান্ডসের হেগে ন্যাটোর এক সম্মেলনে অংশ নিয়ে ইরানের ওপর তেল নিষেধাজ্ঞা শিথিলের ইঙ্গিত দিয়েছেন। পরে নিজের Truth Social একাউন্টে বলেন, “চীন ইরান থেকে তেল কিনতে পারবে কারণ ওদের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার দরকার।” এই মন্তব্যে ট্রাম্প যে ইরানের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, তা আর গোপন নেই।

মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্র এক নতুন খেলায় নেমেছে। শত্রুকে বন্ধু করে কৌশলগত দখলদারি বাড়ানোর এ খেলায় কে জিতবে আর কে হারবে, তা সময়ই বলবে। তবে এক জিনিস নিশ্চিত—এই পরিবর্তন ইসরায়েলের জন্য সহজ হবে না।

لم يتم العثور على تعليقات