ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যকার চলমান সংঘর্ষ নতুন মোড় নিচ্ছে। ইরানের পাল্টা হামলায় হুমকির মুখে পড়েছে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। দেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার এক সময়কার গর্ব ‘আয়রন ডোম’ এখন আর আগের মতো কার্যকর নেই। একের পর এক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র এই প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেদ করে ঢুকে পড়ছে ইসরায়েলের মূল ভূখণ্ডে, প্রাণহানি ঘটাচ্ছে বেসামরিক মানুষদের মধ্যে।
এই সংকটময় পরিস্থিতিতে দ্রুত প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অন্যতম শক্তিধর দেশ জার্মানি। এক যুগ্ম সামরিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে তারা এক ডজনেরও বেশি সামরিক কার্গো বিমান পাঠিয়েছে ইসরায়েলে, যেগুলো ইতোমধ্যেই তেলআবিবের ঘাঁটিগুলোতে নামতে শুরু করেছে।
মিডল ইস্ট মনিটর ও তুরস্কভিত্তিক আনাদোলু এজেন্সির প্রতিবেদন অনুযায়ী, শুক্রবার (২০ জুন) ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে—সাম্প্রতিক সময়েই যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানি থেকে ১৪টি সামরিক কার্গো বিমান তেলআবিবে এসে পৌঁছেছে।
বিমানগুলোতে কী ধরণের সামরিক রসদ আছে, তা প্রকাশ করা হয়নি। তবে জানানো হয়েছে, এসব অস্ত্র ও সরঞ্জাম ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর ‘অপারেশনাল প্রস্তুতি’ জোরদারে সহায়তা করবে। এই বিমানের চালান ১৩ জুন থেকে কার্যকর হওয়া আকাশ ও সমুদ্রপথে গঠিত সহায়তা চ্যানেলের অংশ।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাতে আরও জানা যায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ইসরায়েলে আসা সামরিক কার্গো বিমানের সংখ্যা ৮০০ ছাড়িয়ে গেছে। এই বিমানে কী কী অস্ত্র ও সরঞ্জাম এসেছে, তা এখনো গোপন রাখা হচ্ছে। একইভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির পক্ষ থেকেও এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য আসেনি।
গত ১৩ জুন থেকে ইরান-ইসরায়েলের সরাসরি সামরিক সংঘাতে উত্তাল হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। ইসরায়েল প্রথমে ইরানের সামরিক ঘাঁটি ও পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়। ইরান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় সাঁড়াশি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে হতবাক করে দেয়।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ইরানের এই হামলায় তাদের অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে শতাধিক মানুষ। অন্যদিকে, ইরানের সরকারি গণমাধ্যমগুলো দাবি করছে, ইসরায়েলি বিমান হামলায় ৬৩৯ জন ইরানি নাগরিক নিহত এবং ১,৩০০ জনের বেশি আহত হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এত বড় আকারের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঠেকাতে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত নয়। আয়রন ডোম আগেও ক্ষেপণাস্ত্র ঠেকাতে সক্ষম হলেও এবার এই প্রযুক্তির গাফিলতি প্রকাশ্যে এসেছে। ইরান অত্যন্ত কৌশলে ‘স্যাচুরেশন অ্যাটাক’ চালিয়ে একসঙ্গে শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে, যার ফলে প্রতিরক্ষা ব্যূহ ভেঙে পড়েছে।
এর ফলে ইসরায়েল বাধ্য হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানির সরাসরি সহায়তা নিতে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এই সহায়তা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, আগাম পাল্টা হামলার প্রস্তুতির অংশও হতে পারে।
বর্তমানে যুদ্ধ থামার কোনো ইঙ্গিত নেই। ইরান জানিয়েছে, তারা শুধুমাত্র ইসরায়েল যুদ্ধ থামালে আলোচনায় রাজি হবে। অন্যদিকে, ইসরায়েল বলছে, নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি ধ্বংস না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানির সামরিক সরঞ্জাম ঢালাই শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, বিশ্ব রাজনীতিকেও সরাসরি প্রভাবিত করছে। এটি একটি নতুন যুদ্ধ পর্বের সূচনা নাকি পুরনো শত্রুতার বিস্ফোরক চূড়ান্তরূপ, তা আগামী দিনেই স্পষ্ট হবে।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে—ইসরায়েল-ইরানের সংঘাত কোন পথে এগোয়। যুক্তরাষ্ট্র-জার্মানির সরাসরি সামরিক সহায়তা শুধু যুদ্ধকে দীর্ঘায়িতই নয়, বরং আরও বিধ্বংসী করে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।