ইসরায়েলে ইরানের অতর্কিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আগুনে ঘি ঢাললো ইরান। তেল আবিব, জেরুজালেম ও বিরশেবা শহরে ছোড়া ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ—আহত অন্তত ৩০। বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছে হাসপাতাল পর্যন্ত।..

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতির আরেকটি ভয়াবহ মোড়: ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় এবার ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও বহু আহতের ঘটনা ঘটেছে। টানা সপ্তম দিনের মতো চলমান ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে এই সর্বশেষ হামলা ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে।

শুক্রবার মধ্যরাতের পর, ইরান হঠাৎ করেই ইসরায়েলের ওপর একাধিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। ইরানের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বার্তা সংস্থা ফার্স ও তাসনিম জানিয়েছে, এই হামলা ইরানের পক্ষ থেকে “যথাযথ জবাব” হিসেবে চালানো হয়েছে। তারা দাবি করে, ইসরায়েলি ভূখণ্ডে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সফলভাবে আঘাত হেনেছে ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র।

এদিকে, কাতারভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা তাদের লাইভ রিপোর্টে জানায়, তেল আবিব ও জেরুজালেমে রাতের আকাশে একের পর এক বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্কিত সাধারণ মানুষ বাঙ্কারে আশ্রয় নেয়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরায়েল’ জানিয়েছে, অন্তত চারটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বিস্ফোরিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ আঘাত হেনেছে দক্ষিণাঞ্চলের বিরশেবা শহরের একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি হাসপাতালে—‘সোরোকা মেডিকেল সেন্টার’। হাসপাতালে সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্র বিস্ফোরণে রোগী ও কর্মচারীদের মধ্যে হুলুস্থুল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলার সময় অন্তত ৩০ জন সেখানে গুরুতর আহত হন। পাশাপাশি হাসপাতালের ভেন্টিলেশন সিস্টেম, ওয়ার্ড ও জরুরি বিভাগের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিবিসি লাইভ সম্প্রচারে রামাত গান এলাকা থেকে পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার ফলে বেশ কিছু আবাসিক ভবন, যানবাহন এবং একটি ছোট শিল্পকারখানা ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলগুলোতে উদ্ধার ও পুনর্গঠন কাজ শুরু করেছে।

আল জাজিরার তথ্য অনুসারে, ইরানের এই ধারাবাহিক পাল্টা হামলা একটি সুপরিকল্পিত সামরিক কৌশলের অংশ। বিশেষ করে ইসরায়েলের সাম্প্রতিক ড্রোন হামলার জবাবেই এই প্রতিক্রিয়া বলে বিশ্লেষকেরা মনে করছেন।

বিশ্লেষকরা আশঙ্কা করছেন, এই সংঘাত এখন সরাসরি যুদ্ধের দিকে গড়াতে পারে। কারণ পাল্টা-পাল্টি হামলার ধরন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি বিস্তৃত ও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। সাধারণ নাগরিক, হাসপাতাল ও জনবহুল এলাকায় হামলা আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ইঙ্গিত দেয় বলেও অনেকে মনে করছেন।

জাতিসংঘ মহাসচিব গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং উভয় পক্ষকে অবিলম্বে সংঘর্ষ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত ইসরায়েল বা ইরান কোনো পক্ষই পিছু হটার ইঙ্গিত দেয়নি। বরং উভয় পক্ষ নিজেদের অবস্থানে অনড় এবং প্রতিশোধপরায়ণ ভাষায় বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছে।

ইরান-ইসরায়েলের এই সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, পুরো বিশ্বের জন্য উদ্বেগজনক এক সংকেত। সিরিজ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, বেসামরিক স্থানে বিস্ফোরণ, হাসপাতালের ধ্বংস—এই যুদ্ধের বিভীষিকা এখন আর সীমান্তে সীমাবদ্ধ নেই। পরবর্তী হামলা কোথায়, তা কেউ জানে না—কিন্তু শান্তির পথে ফেরার সময় যে দ্রুত ফুরিয়ে আসছে, তা বুঝতে সময় লাগছে না।

Nema komentara