ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাতের ঠিক মাঝখানে এক বিস্ময়কর কূটনৈতিক পদক্ষেপ নিল তেহরান। জাতির নিরাপত্তা ও সম্মান রক্ষার ব্যস্ত মুহূর্তে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি সরাসরি পৌঁছে গেলেন তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায়, যেখানে বসছে মুসলিম বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করার লক্ষ্যে ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থা (ওআইসি) আয়োজিত গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইয়ং জার্নালিস্টস ক্লাব জানিয়েছে, এই সম্মেলনে বিশ্বের অন্তত ৪০টি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অংশ নিচ্ছেন। তবে আব্বাস আরাঘচির উপস্থিতি আলাদা গুরুত্ব বহন করে। কারণ, তাঁর দেশ এই মুহূর্তে সরাসরি যুদ্ধের মুখোমুখি, যেখানে প্রতিনিয়ত ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও বোমার গর্জনে কেঁপে উঠছে ইরানের বিভিন্ন শহর।
শুক্রবার সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইউরোপীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক সেরে সরাসরি আঙ্কারায় এসে পৌঁছান আরাঘচি। সেখানে তিনি মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছেন। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এই সফর নিছক সম্মেলনে অংশগ্রহণ নয়, বরং এটি যুদ্ধ পরিস্থিতিকে শান্তির পথে টানার একটি সুদূরপ্রসারী কৌশল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইরান বুঝে গেছে — শুধু পাল্টা হামলা বা সামরিক প্রতিরোধ যথেষ্ট নয়। মুসলিম বিশ্বের সহানুভূতি ও একাত্মতা এখন সময়ের দাবি। আর সেই একাত্মতা গড়তেই ওআইসি সম্মেলনে আব্বাস আরাঘচির এই উপস্থিতি এক ঐতিহাসিক কূটনৈতিক ধাপ।
এদিকে, তুরস্কও এই সংকটকে কেন্দ্র করে একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে। ইসরায়েল ও ইরানের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান ইতোমধ্যে দুইবার কথা বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে।
এই আলোচনা মূলত ছিল ইরানের ওপর ইসরায়েলি হামলা বন্ধ করতে ট্রাম্পের মাধ্যমে ইসরায়েলকে চাপে রাখা। কিন্তু বাস্তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের অবস্থান তেমন কঠোর ছিল না বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক মহল।
শুক্রবার ট্রাম্প এক বক্তব্যে ইরান-বিরোধী সামরিক অভিযানের সম্ভাবনাকে লঘু করে দেখান, যা এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
১৩ জুন থেকে শুরু হওয়া সংঘাত ইতোমধ্যে রূপ নিয়েছে এক ভয়ঙ্কর যুদ্ধ-প্রতিযোগিতায়। ইসরায়েল ধারাবাহিকভাবে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা এবং কৌশলগত অঞ্চলগুলোতে হামলা চালাচ্ছে। এর পাল্টা জবাব দিতে গিয়ে ইরান ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও সশস্ত্র বিদ্রোহীদের ব্যবহার করছে।
এই পাল্টাপাল্টি হামলায় উভয় দেশের বহু বেসামরিক নাগরিক ও সামরিক বাহিনীর সদস্য নিহত ও আহত হয়েছেন।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে—এই সহিংসতা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে গোটা মধ্যপ্রাচ্য অস্থিরতায় নিমজ্জিত হবে।
এই মুহূর্তে ওআইসি সম্মেলন মুসলিম বিশ্বের একমাত্র প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ইরান, তুরস্ক, কাতার, মালয়েশিয়া থেকে শুরু করে সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মতো দেশগুলো একসাথে বসছে।
এই সম্মেলনে ইরান আশা করছে—ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে একটি সম্মিলিত প্রতিবাদ ও কৌশলগত পদক্ষেপের আহ্বান আসবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ওআইসি এই মুহূর্তে ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে পারে, তাহলে তা হতে পারে ইসরায়েল ও পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য বড় কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ। একইসঙ্গে তা হতে পারে যুদ্ধ থেকে শান্তির পথে যাওয়ার সম্ভাব্য সেতুবন্ধন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সাহসী ও ঝুঁকিপূর্ণ সফর শুধুই এক সম্মেলন যোগদান নয়, বরং তা এক বিশাল বার্তা বহন করে—যুদ্ধ নয়, শান্তিই চূড়ান্ত লক্ষ্য।
		
				
			


















