close

ভিডিও দেখুন, পয়েন্ট জিতুন!

ইশরাককে নিয়ে আগুনে রাজনীতি: টানা ৩১ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি, অন্তর্বর্তী সরকারকে চাপের মুখে ফেলল বিএনপি..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে শপথ করাতে চূড়ান্ত দাবি, টানা ৩১ ঘণ্টা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে সরকারকে চাপে ফেলেছে বিএনপি। এখন প্রশ্ন—অন্তর্বর্তী সরকার কি নতিস্বীকার করবে, নাকি রাজপথে আরও উত্তাপ ছড়াবে আন্দোল..

বিএনপির টানা কর্মসূচিতে সরকারের ওপর বাড়ছে চাপ

রাজপথে টানা ৩১ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি, নগর ভবনে তালা, নাগরিক সেবা বন্ধ, সরাসরি উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবি—এইসব কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর নজিরবিহীন চাপ সৃষ্টি করেছে। মূলত ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিশ্চিত করার দাবিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা এই আন্দোলন এখন অন্তর্বর্তী সরকারের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে বড় রাজনৈতিক ইঙ্গিত দিচ্ছে।

গেল ১৪ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় বিএনপির নেতাকর্মীদের লাগাতার উপস্থিতি, প্রতিদিন অবস্থান, বিক্ষোভ, স্লোগান এবং সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দলটি রাজনৈতিক শক্তি প্রদর্শন করেছে। বিএনপি মনে করছে, আদালতের রায়ে শপথের বাধা কেটে যাওয়ার বিষয়টিও তাদের আন্দোলনের একটি ‘রাজনৈতিক জয়’।

এছাড়াও দলটির উচ্চপর্যায়ের নেতারা জানিয়েছেন, এই কর্মসূচির মাধ্যমে শুধু একক কোনো ইস্যু নয়, সামগ্রিক রাজনৈতিক পরিবর্তনের দাবিও স্পষ্ট করা হয়েছে।


সরাসরি দাবি: তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি সরাসরি দাবি জানিয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া, মাহফুজ আলম এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানকে অব্যাহতি দিতে হবে। দলটির বক্তব্য, এদের কেউ কেউ একটি নতুন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত, যা অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

বিএনপির ভাষায়, “এই উপদেষ্টারা সরকারকে পক্ষপাতদুষ্ট করে তুলছেন, জনগণ তাদের গ্রহণ করছে না।” দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই দাবি তুলেছেন গুলশানে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে। তাঁর বক্তব্য, “সরকার যদি নিরপেক্ষ থাকার কথা বলে, তাহলে এমন বিতর্কিত উপদেষ্টাদের রাখার যৌক্তিকতা কোথায়?”


ইশরাকের দাবি মানা না হলে ঈদের পর আবার রাজপথে

বিএনপি মনে করছে, ইশরাক হোসেনের মেয়র হিসেবে শপথের বিষয়টি আদায় না হলে ঈদুল আজহার পর রাজপথ আরও উত্তপ্ত হবে। আন্দোলন অব্যাহত থাকবে, এবং আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত এটি বিস্তৃত হতে পারে।

তারা জানিয়েছে, ডিসেম্বরের মধ্যে সুষ্ঠু নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর আর কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমর্থন থাকবে না। তাদের দাবি, সরকারকে এখনই একটি নির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে, যেখানে নির্বাচনের তারিখ ও কাঠামো স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকবে।


তালাবদ্ধ নগর ভবন, জনদুর্ভোগ আর উচ্ছ্বাস

ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করতে বিলম্ব হওয়ায় ১৫ মে থেকে বিএনপি নগর ভবনের প্রধান ফটকসহ গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এর ফলে নগর ভবনকেন্দ্রিক সকল সেবা কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।

বিএনপির দাবি ছিল, যতক্ষণ পর্যন্ত ইশরাককে শপথবদ্ধ করা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নগর ভবনের স্বাভাবিক কার্যক্রম চলবে না। হাইকোর্ট থেকে গেজেট স্থগিত চেয়ে করা রিট খারিজ হওয়ার খবর আসার পর আন্দোলনরত নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক উচ্ছ্বাস দেখা দেয়। তারা বলেন, “এই মাত্র খবর এল, জনগণের বিজয় হলো।” এরপর বেরিয়ে আসে আনন্দমিছিল।


জনগণের কাছে ক্ষমা, আন্দোলন চলবে

ইশরাক হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা জানি এই কর্মসূচির কারণে ঢাকার জনগণ দুর্ভোগে পড়েছে। কিন্তু সরকারের বাধ্য করার কারণে আমাদের এমন কর্মসূচি দিতে হয়েছে। জনগণের কাছে আমরা ক্ষমা চাই। তবে দাবিগুলো থেকে এক চুলও সরব না।”

তিনি আরও জানান, উপদেষ্টা তিনজনের পদত্যাগ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। হাইকোর্টের রায় এসেছে, এখন সরকার কী পদক্ষেপ নেয় সেটার ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী কর্মসূচি নির্ধারণ করা হবে।


সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে সংশয়: বিএনপি

বিএনপি বারবার বলছে, অন্তর্বর্তী সরকার নিরপেক্ষ থাকছে না। কোনো কোনো মহল রাজনৈতিক সুবিধা নেওয়ার জন্য এই সরকারকে ব্যবহার করছে। এতে দেশের গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি, সাংবিধানিক নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে।

তারা এটাও বলছে, এই পরিস্থিতির দায় সম্পূর্ণ সরকারের। “জনআকাঙ্ক্ষা উপেক্ষা করে সরকার যদি শুধু চাপের মুখে সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তা দেশের জন্য বিপদজনক সংকেত। জনগণ তখন আন্দোলনকেই একমাত্র পথ হিসেবে বেছে নেবে।”


সংসদ নির্বাচন না হলে—সমর্থনও থাকবে না

ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন না হলে অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপির সমর্থন দেওয়া সম্ভব হবে না বলে দলটি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে। তাদের মতে, “একটি গ্রহণযোগ্য, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচনই এখন প্রধান অগ্রাধিকার। এজন্য অবিলম্বে নির্দিষ্ট রোডম্যাপ দিতে হবে।”

এছাড়া তারা মনে করছে, সংস্কার এবং নির্বাচনের প্রক্রিয়া একসঙ্গে চলতে পারে। তবে কোনোভাবেই ফ্যাসিবাদী শক্তিকে পুরস্কৃত করা যাবে না।


উপসংহার

ইশরাক ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিএনপির এই রাজপথ-নির্ভর কৌশল তাদের দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক অবস্থানকে একধাপ এগিয়ে দিয়েছে। সরকার যদি দ্রুত ও সুপরিকল্পিত সিদ্ধান্ত না নেয়, তাহলে সামনে আরো বড় রাজনৈতিক সংঘর্ষ, জনঅসন্তোষ এবং রাজপথে আন্দোলনের বিস্তার দেখতে পারে দেশ।

বর্তমানে পুরো রাজনৈতিক পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে এই প্রশ্নটি—অন্তর্বর্তী সরকার কি বিএনপির চাপের কাছে মাথানত করবে, নাকি অবস্থান কর্মসূচির উত্তাপ আরও বাড়াবে?

Walang nakitang komento