ঢাকা দক্ষিণ সিটির সাবেক মেয়র প্রার্থী ও আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ইশরাক হোসেনকে ঘিরে ফের উত্তপ্ত দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। সম্প্রতি নগর ভবনে ‘মেয়র’ পরিচয়ে সভা করার পর থেকেই সরকার বিএনপিকে কঠোর বার্তা দিয়েছে—ইশরাক যদি থামেন না, তাহলে সিটি নির্বাচন হবেই। এই ইঙ্গিতপূর্ণ হুমকি নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে বিএনপি।
রাজশাহীতে অবস্থানরত বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম সরাসরি জানিয়েছেন, দল বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং শিগগিরই ইশরাক প্রসঙ্গে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কারভাবে জানাবে।
তিনি বলেন,-আমি দুদিন ধরে রাজশাহীতে আছি। দলের হাইকমান্ড ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক করেছেন। শিগগিরই ইশরাক ইস্যুতে বিএনপি তার অবস্থান জানাবে। তবে একটি কথা পরিষ্কার করে বলি—জাতীয় নির্বাচনের আগে কোনোভাবেই স্থানীয় নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না।
আজ শুক্রবার সকাল ১১টায় রাজশাহীর গোদাগাড়ীর প্রেমতলি গৌরাঙ্গবাড়িতে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
আবদুস সালাম জানান, সম্প্রতি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টাদের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেখানে শুধু জাতীয় নির্বাচন নিয়েই আলোচনা হয়েছে—স্থানীয় নির্বাচন কিংবা ইশরাক ইস্যুতে এখনই সিদ্ধান্ত আসেনি। বিএনপির মতে, স্থানীয় সরকার নির্বাচন এখন সরকারের এজেন্ডা, বিএনপির নয়।
এছাড়া নির্বাচন কমিশনকে জাতীয় নির্বাচনের জন্য সময়সূচি ঘোষণা করার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
১৫ জুন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে অনুষ্ঠিত হয় একটি সভা, যার ব্যানারে ইশরাক হোসেনকে 'মাননীয় মেয়র' বলা হয়। তিনি ওই সভায় প্রধান অতিথি হিসেবেই অংশ নেন।
এটাই ছিল নগর ভবনে তাঁর প্রথম সরাসরি উপস্থাপনা। এরপরও তিনি ‘মেয়র’ পরিচয়ে একাধিক মতবিনিময় সভা করেছেন। বিষয়টি নিয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে যেমন আলোচনার ঝড় বইছে, তেমনি সরকারও বার্তা দিয়েছে—এই কার্যক্রম বন্ধ না হলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা হবে।
আবদুস সালাম বলেন,-ইশরাক ইস্যুতে সরকারের এই হুমকির জবাবে বিএনপি চুপ থাকবে না। আমাদের বক্তব্য খুব দ্রুতই সামনে আসবে।
জাতীয় নির্বাচনের প্রচার কেমন হবে তা নিয়েও কথা বলেন সালাম। তিনি বলেন,-নির্বাচনী প্রচারণা যেন অর্থের দাপটে নিয়ন্ত্রিত না হয়, আবার যেন মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকারও বাধাগ্রস্ত না হয়—এই ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।
এসময় পোস্টার ছাপানো, বিলবোর্ড স্থাপন, ব্যানার ব্যবহার নিয়ে নীতিগত দিক তুলে ধরেন তিনি।
প্রেমতলির সভায় সীমান্ত ইস্যুতে বক্তব্য রাখেন সালাম। তিনি বলেন,-ভারতের পুশ-ইন আমাদের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কেউ যদি অবৈধভাবে প্রবেশ করে, তাহলে তাদের ফেরত পাঠাতে হলে সরকারকে জানাতে হবে। এভাবে সীমান্তে মানুষ ঠেলে পাঠানো সম্পূর্ণ অনৈতিক।
সমাবেশে আবদুস সালাম বলেন,-বিএনপি সব ধর্ম, সব মতের রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। আওয়ামী লীগই সবচেয়ে বেশি হিন্দুদের জমি দখল করেছে। আমাদের দলের কোনো নেতা কারও জমি দখল করেননি। এখানে ধর্ম নয়, ন্যায়বিচারই বড় কথা।
তিনি আরও যোগ করেন,-কে হিন্দু, কে মুসলিম, কে বৌদ্ধ—বিএনপির কাছে তা বিবেচ্য নয়। আমাদের কাছে নাগরিক অধিকারই মুখ্য।
ইশরাক ইস্যু শুধু একটি ব্যক্তির পদক্ষেপ নয়—এটি হয়ে উঠেছে সরকার ও বিএনপির মধ্যে রাজনৈতিক শক্তির নতুন সংঘাত।
জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকার যেখানে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে অগ্রসর হতে চাইছে, বিএনপি সেখানে বলছে “না, আগে জাতীয় নির্বাচন—তারপর অন্য সব।
তবে ইশরাক যদি থামেন না, বিএনপি কি তাকে দলের পক্ষ থেকে বিরত রাখবে, না কি রুখে দাঁড়াবে—এই প্রশ্নের উত্তর এখন সময়ের অপেক্ষা।