সম্প্রতি ইরান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম তেহরান টাইমস এক ভয়ঙ্কর ষড়যন্ত্রের তথ্য ফাঁস করেছে, যা ইসরাইল কর্তৃক রচিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক হামলার পেছনে ইরানকে ফাঁসানোর উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ছিল। সংবাদমাধ্যমটির দাবি, ইসরাইল একটি গোপন ষড়যন্ত্র করেছিল, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরে এক ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটিয়ে তা ইরানের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হবে এবং সেই প্ররোচনায় দুই দেশকে সামরিক সংঘর্ষে টেনে আনা হবে।
তেহরান টাইমসের বরাতে জানা যায়, এই ষড়যন্ত্রের মূল লক্ষ্য ছিল মার্কিন জনগণের মনোভাব এমনভাবে তৈরি করা যাতে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য জনমত গড়ে ওঠে। ষড়যন্ত্রটি ছিল একাধিক স্তরে পরিকল্পিত, যেখানে ধ্বংসাত্মক হামলার সঙ্গে ইরানের জড়িত থাকার প্রমাণ তৈরি করা হতো।
ইরানি কর্তৃপক্ষ এই ষড়যন্ত্রের তথ্য এক বন্ধুত্বপূর্ণ দেশের কাছ থেকে পেয়েছে। খবর পেয়ে ইরান যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চস্তরের কর্মকর্তাদের সতর্ক করেছে, ফলে পরিকল্পিত বিস্ফোরণ সফলভাবে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। এভাবে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক সংঘর্ষ রুখে দেওয়ার পথ সুগম হয়েছে।
এর আগে, গত ১৩ জুন ইরান ও ইসরাইলের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়, যখন ইসরাইল বিনা উসকানিতেই ইরানের সামরিক, পারমাণবিক ও বেসামরিক স্থাপনাগুলোর ওপর বিমান হামলা চালায়। এই হামলার জেরে তেহরান ও তেলআবিবের মধ্যে ১২ দিনব্যাপী তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়, যার ফলে ইরানের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী কমপক্ষে ৬০৬ জন নিহত এবং প্রায় ৫ হাজার ৩৩০ জন আহত হয়।
তবে জেরুজালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইরান প্রতিশোধ হিসেবে ইসরাইলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোন হামলা চালায়, যা কমপক্ষে ২৯ জনের মৃত্যু এবং ৩ হাজার ৪০০-এরও বেশি আহতের কারণ হয়। দুই পক্ষের মধ্যকার এই যুদ্ধ পরিস্থিতি পাকিস্তানের সমর্থন পায় ইরানের প্রতি, এবং তারপর যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ২৪ জুন থেকে সংঘাত থেমে যায়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইসরাইলের এই গোপন ষড়যন্ত্রের ফাঁস হওয়া শুধু দুই দেশের মধ্যকার উত্তেজনা বাড়ানোই নয়, বরং বিশ্ব রাজনীতিতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে কাজ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে যে যুদ্ধে ফাঁসানো হতে চাওয়া হয়েছিল, তা বাধাগ্রস্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে আপাতত কিছুটা শিথিলতা এসেছে। তবে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা এখনও বিদ্যমান।
এই ধরনের ষড়যন্ত্র ইরান-ইসরাইল এবং ইরান-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের বহুবর্ষীয় উত্তেজনাকে আরও জটিল করে তোলে। যুক্তরাষ্ট্রে এমন একটি হামলা, যা ইরানের নামে সাজানো হতো, তা বিশ্বরাজনীতিতে ভয়াবহ প্রভাব ফেলত এবং মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতকে ভয়াবহ আকার দিত। তবে ইরানের সতর্কতায় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সমঝোতায় তা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।