ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচিকে নিয়ে ভারতীয় ইউটিউবার গৌরব আরিয়ার অশোভন মন্তব্য ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে দিল্লি ও তেহরানের কূটনৈতিক সম্পর্কে। ইসলামাবাদে সাম্প্রতিক এক শান্তি মিশনের সফর শেষে, আরাগচিকে নিয়ে নিজের ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করেন গৌরব, যেখানে তিনি ইরানের শীর্ষ কূটনীতিকের প্রতি অবমাননাকর ও কুরুচিপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করেন।
ইউটিউবার গৌরব আরিয়া ভারতের একজন সাবেক সেনা কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকেন। তিনি তার ভিডিওতে ইরান ও পাকিস্তানের সম্পর্ককে ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেন এবং ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে ব্যক্তিগত আক্রমণ চালান।
এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানায় ইরান। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশ্য বিবৃতিতে ঘটনার নিন্দা জানায় এবং ভারতের সরকারকে এ বিষয়ে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে আহ্বান জানায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ‘এক্স’ (সাবেক টুইটার)-এ ভারতের ইরান দূতাবাস থেকে একটি পোস্টে বলা হয়, “গৌরব আরিয়ার মন্তব্য ভারতের সরকার বা জনগণের মতামত প্রতিফলিত করে না। এটি একটি ব্যক্তিগত মতামত, যার সাথে দিল্লির কোনো সম্পর্ক নেই।”
ঘটনার পরপরই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কূটনৈতিকভাবে তৎপর হয়। মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ভারতের সরকার আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক রীতি ও সম্মানের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা জানায়, ইউটিউবের এই কনটেন্ট সরকারের আওতাভুক্ত নয় এবং বিষয়টি সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম কর্তৃপক্ষের মাধ্যমেই সমাধানযোগ্য।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, বিষয়টি শুধু ব্যক্তিগত এক ইউটিউবারের মন্তব্যে সীমাবদ্ধ না থেকে দুই দেশের সম্পর্কের উপর ছায়া ফেলতে পারে। বিশেষ করে এমন এক সময়ে, যখন ভারত এবং ইরান আঞ্চলিক সহযোগিতা এবং চাবাহার বন্দর প্রকল্পে একসাথে কাজ করছে, তখন এমন একটি অপ্রত্যাশিত ঘটনা কৌশলগত সম্পর্কে টানাপোড়েন তৈরি করতে পারে।
ইরান ও ভারতের সম্পর্ক ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ও কৌশলগত। ইরান ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা ও মধ্য এশিয়ায় প্রভাব বিস্তারের জন্য একটি মুখ্য সহযোগী দেশ। অপরদিকে, ভারত ইরানের জন্য একটি বড় অর্থনৈতিক অংশীদার, বিশেষ করে বন্দরের উন্নয়ন ও বাণিজ্যপথে। তাই এমন সংবেদনশীল সময়ে কূটনৈতিক মর্যাদা লঙ্ঘনকারী কোনো মন্তব্য দু’দেশের দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ককে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
বর্তমানে ইরান এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের দিক থেকে আরও স্পষ্ট অবস্থান এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের মন্তব্য প্রতিরোধে ব্যবস্থা চায়। অপরদিকে, ভারতও বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে কূটনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে কাজ করছে।
উপসংহার:
এই ঘটনা দেখিয়ে দিল সোশ্যাল মিডিয়ার এককথিত স্বাধীন মতামত কীভাবে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে মন্তব্য অস্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু প্রতিক্রিয়ার তীব্রতা প্রমাণ করে—আজকের বিশ্বে কোনো কথাই একেবারে 'ব্যক্তিগত' থাকে না।



















