মধ্যপ্রাচ্যের উত্তপ্ত পরিস্থিতি আরও একবার ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করলো ইরানের ইস্ফাহান প্রদেশে ইসরায়েলি বাহিনীর চালানো এক মর্মান্তিক হামলায়। এ হামলায় একজন অন্তঃসত্ত্বা নারী, তাঁর স্বামী ও দুটি শিশু সন্তানসহ ছয়জন নিহত হয়েছেন। ইরানি গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, নিহত নারীর সন্তানের জন্ম হওয়ার কথা ছিল মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে।
তাসনিম সংবাদ সংস্থার বরাতে জানা যায়, ইস্ফাহানের নাজাফাবাদ এলাকায় একটি চলন্ত গাড়িকে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। একই সঙ্গে আরও একটি গাড়িও টার্গেটে ছিল। এই হামলায় ছয়জন প্রাণ হারান। তাঁদের মধ্যে রয়েছে ১০ ও ১৩ বছর বয়সী দুটি শিশু। সংবাদ সংস্থা বলছে, নিহত নারী ছিলেন অন্তঃসত্ত্বা, এবং হামলার সময় তাঁর স্বামীও গাড়িতে ছিলেন। উভয়েই ঘটনাস্থলেই মৃত্যুবরণ করেন।
ইরানের মেহের নিউজ জানায়, ১৩ জুন ভোরবেলা শুরু হওয়া এই হামলা শুধুমাত্র সামরিক ঘাঁটি ও পরমাণু স্থাপনায় সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি আবাসিক এলাকাকেও আঘাত করেছে। এভাবে সাধারণ মানুষ, শিশু ও নারীদের লক্ষ্য করে চালানো হামলাকে ইরান সরকার ‘মানবতাবিরোধী অপরাধ’ বলে আখ্যা দিয়েছে। সবচেয়ে দুঃখজনক হচ্ছে, নাতানজে অবস্থিত ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাও ক্ষতির শিকার হয়েছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষের তথ্য মতে, শুধুমাত্র ১৩ জুন থেকে ইসরায়েলের চালানো আক্রমণে ইরানে ৫৮৫ জন নিহত হয়েছেন। এদের অর্ধেকের বেশি বেসামরিক নাগরিক। আহত হয়েছেন আরও অন্তত ১,৩০০ জন। অনেকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। হাসপাতালগুলোয় জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রেস অফিস এক বিবৃতিতে দাবি করেছে, তেহরান পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ইতোমধ্যেই ৪০০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং শত শত ড্রোন ছুঁড়ে দিয়েছে ইসরায়েল অভিমুখে। যুদ্ধ এখন সীমান্ত পেরিয়ে আকাশে, ভূমিতে ও সাইবার জগতে বিস্তার লাভ করছে।
এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ, ওআইসি ও অন্যান্য মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের মৃত্যু নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তুরস্ক, কাতার, মালয়েশিয়া, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশ। তারা যুদ্ধ বন্ধ করে দ্রুত মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছে।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যে মাত্রায় পৌঁছেছে, তাতে শুধু সামরিক শক্তির মহড়াই চলছে না, বরং ধ্বংস হচ্ছে মানবতা, ভেঙে যাচ্ছে পরিবার, নিভে যাচ্ছে আগত প্রাণ। অন্তঃসত্ত্বা নারীর এমন নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় বিশ্বব্যাপী বয়ে যাচ্ছে শোকের ছায়া।
		
				
			


















