ইরান আবারও এক চাঞ্চল্যকর নিরাপত্তা হুমকির মুখোমুখি— এবং এবার হুমকি এসেছে দেশের ভেতর থেকেই। ইরানি পুলিশের মুখপাত্র সাঈদ মন্তাজেরোলমাহদি এক নাটকীয় ঘোষণায় জানিয়েছেন, ইরানের বিভিন্ন প্রদেশে ‘শত্রুপক্ষ’ কর্তৃক স্থাপিত ড্রোন তৈরির গোপন কারখানা ও ড্রোন পরিবহনকারী যানবাহনের সন্ধান পাওয়া গেছে। এই শত্রুপক্ষ কারা, সে বিষয়ে সরাসরি কিছু না বলা হলেও, সব আলামতই ইসরায়েলের দিকেই ইঙ্গিত করছে।
এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা সর্বপ্রথম প্রকাশ করেছে ইরানের লেবার নিউজ এজেন্সি, যেটি নিশ্চিত করেছে— ইসরায়েলের তৈরি ১৪টি ড্রোন ইতিমধ্যেই ভূপাতিত করা হয়েছে। এর পেছনে কারা যুক্ত ছিল, কীভাবে এই ড্রোনগুলো ইরানে প্রবেশ করল, কিংবা দেশীয় কোনো গোষ্ঠী এতে সহায়তা করেছে কি না— সে বিষয়ে বিস্তারিত তদন্ত চলছে।
এমন একটি নিরাপত্তা হুমকির মধ্যেই তেহরানে প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান মন্ত্রিসভার সঙ্গে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে মিলিত হন। ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় বুধবার, ১৮ জুন সকালে প্রেসিডেন্ট ভবনে।
ইরানি সংবাদমাধ্যম তাসনিম প্রকাশিত ছবিতে দেখা গেছে, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ রেজা আরেফ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ঘটনাগুলো ইরানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা কাঠামোর গভীরে থাকা দুর্বলতা তুলে ধরেছে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক ড. আব্বাস মোরতাজাভি বলেন
যদি সত্যিই ইসরায়েল ইরানের ভেতরে কারখানা স্থাপন করতে পারে, তাহলে সেটি কেবলমাত্র সেনা নিরাপত্তার ব্যর্থতা নয়, বরং গোটা রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ওপরই একটি আঘাত।
এদিকে, এমন এক সময়ে এই খবরে দেশজুড়ে আলোড়ন উঠেছে, যখন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে উত্তেজনা তুঙ্গে। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি, মধ্যপ্রাচ্যে ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে ইরান ক্রমাগত বৈশ্বিক চাপের মুখে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশটির ভেতরেই যদি শত্রুর ঘাঁটি সক্রিয় হয়ে ওঠে— তাহলে তা শুধুই নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, এটি জাতীয় সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি।
সরকার এখন এই বিষয়টি নিয়ে সর্বোচ্চ স্তরে তৎপর হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে— শত্রুদের নেটওয়ার্ক চিহ্নিত করে দ্রুত ধ্বংস করতে হবে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এসব গোপন ড্রোন কারখানার পেছনে হয়তো অভ্যন্তরীণ কোনো চক্র কাজ করছে, যারা বিদেশি শক্তির সহায়তায় ইরানকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে।
তবে রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তারা এখনো সরাসরি ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করছেন না— আন্তর্জাতিক কূটনীতির প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এই কৌশল নিয়েছেন বলেই ধারণা।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, ইরানের ভেতরেই যদি এমন অভিযান সফলভাবে পরিচালিত হয়, তাহলে তা ভবিষ্যতে আরও বড় ধরনের সংঘাতের জন্ম দিতে পারে। ড্রোন প্রযুক্তি, গুপ্তচরবৃত্তি, এবং সীমান্তপারের যুদ্ধনীতি— এই সবকিছুর নতুন অধ্যায় শুরু হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যে। আর তার কেন্দ্রে রয়েছে ইরান।
ইরানের মাটিতে শত্রুপক্ষের গোপন ড্রোন কারখানা— এটি কেবল একটি খবর নয়, বরং রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার ভয়াবহ সংকেত। প্রেসিডেন্টের বৈঠক, পুলিশের বিবৃতি, এবং আন্তর্জাতিক উত্তেজনা— সব মিলে পরিস্থিতি দ্রুত রূপ নিচ্ছে এক অনির্দেশ্য ভবিষ্যতের দিকে।