ইরানে পারমাণবিক হামলা হলে ইসরায়েলেও বোমা ফেলবে পাকিস্তান, দাবি অস্বীকার ইসলামাবাদের..

আই নিউজ বিডি ডেস্ক  avatar   
আই নিউজ বিডি ডেস্ক
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে একটি ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়—ইসরায়েল ইরানে হামলা চালালে পাকিস্তানও ইসরায়েলে পারমাণবিক বোমা ফেলবে। ইসলামাবাদ এ দাবিকে 'ভিত্তিহীন ও দায়িত্বজ্ঞানহীন' বলে..

মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার উত্তেজনা দিনে দিনে তীব্র আকার ধারণ করছে। চতুর্থ দিনে গড়ানো এই সংঘাতের মাঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক বিস্ফোরক দাবি ভাইরাল হয়েছে—ইসরায়েল যদি ইরানে পারমাণবিক হামলা চালায়, তবে পাকিস্তান পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে ইসরায়েলের ওপর বোমা ফেলবে।

এই দাবিটি রাতারাতি ছড়িয়ে পড়ে এবং কিছু মিডিয়া প্ল্যাটফর্মেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। তবে ইসলামাবাদ এমন দাবিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছে।

সোমবার, ১৬ জুন পাকিস্তানের জাতীয় সংসদে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এই দাবিকে 'চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং মিথ্যা' বলে অভিহিত করেন।

তিনি সাফ জানিয়ে দেন—"এই ধরনের মন্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই। পাকিস্তান ১৯৯৮ সালেই পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছিল যে, আমাদের পারমাণবিক অস্ত্র শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য, আক্রমণের জন্য নয়।"

তিনি আরও বলেন, “পাকিস্তান কখনোই পরমাণু যুদ্ধের উস্কানি দেবে না এবং আমাদের পারমাণবিক নীতি একেবারেই প্রতিরক্ষামূলক। আমরা শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে বিশ্বাস করি এবং এই অঞ্চলকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে চাই না।”

পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন যে, পাকিস্তান কখনো পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (NPT) স্বাক্ষর করেনি এবং ভবিষ্যতেও তাতে সই করবে না।
তার ভাষায়, “আমরা আমাদের স্বতন্ত্র পরমাণু নীতিতে অটল রয়েছি। এটা আমাদের সার্বভৌম সিদ্ধান্ত এবং এটি পরিবর্তনের প্রশ্নই আসে না।”

তিনি বলেন, পাকিস্তান এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পারমাণবিক শক্তি থাকার পরও পাকিস্তান কখনো তা অপব্যবহার করেনি এবং আগামীতেও করবে না।

ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলার প্রসঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন—“যেকোনো পারমাণবিক স্থাপনায় সামরিক হামলা আন্তর্জাতিক আইনের মারাত্মক লঙ্ঘন। এটি কেবল ওই অঞ্চলেই নয়, বিশ্বব্যাপী বিপজ্জনক পরিণতির কারণ হতে পারে।”

তার মন্তব্য অনুযায়ী, “এই ধরনের কোনো হামলা শুধু একটি দেশের নিরাপত্তাকেই হুমকিতে ফেলে না, বরং এটি গোটা বিশ্বের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, চলমান উত্তেজনার মধ্যে এমন গুজব ছড়িয়ে রাজনৈতিক উত্তাপ আরও বাড়িয়ে তোলাই কিছু মহলের উদ্দেশ্য। এতে শুধু ভুল বার্তা ছড়ায় না, বরং বৈশ্বিকভাবে ইসলামাবাদ ও তেলআবিবের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়।

মিডিয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন ভুয়া তথ্য ছড়ালে তা প্রতিরোধ করতে হবে সরকার ও সামাজিক মাধ্যমগুলোকেই। কারণ একটিমাত্র ভুল তথ্যই সারা বিশ্বের শান্তি বিনষ্ট করতে পারে।

সবশেষে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে—তাদের পারমাণবিক অস্ত্র শুধুমাত্র জাতীয় নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক শান্তির নিশ্চয়তার জন্য রাখা হয়েছে। তেহরান ও তেলআবিবের সংঘাতে পাকিস্তান কোনো পক্ষ নিচ্ছে না এবং এই উত্তেজনাকে আরও বাড়িয়ে তোলার কোনো ইচ্ছাও তাদের নেই।

একটি ভুয়া দাবিকে ঘিরে সোশ্যাল মিডিয়ার উত্তাপ অনেক সময় বাস্তব কূটনীতিক পরিস্থিতিকে প্রভাবিত করে। তবে পাকিস্তান তাদের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়ে প্রমাণ করেছে—শান্তি ও প্রতিরক্ষা-এই দুটিই তাদের মূলনীতি। মিথ্যা গুজব নয়, এখন প্রয়োজন বাস্তবতাকে সামনে রেখে আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানের উদ্যোগ।

Tidak ada komentar yang ditemukan