ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ শহর—মাশহাদ, কোম ও কারাজ—গত ২৪ ঘণ্টায় একাধিক বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে কেঁপে উঠেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওগুলো যেন সেই বিভীষিকার প্রমাণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৪ মে, রবিবার দিনগত রাতে ইরানের উত্তরের অন্যতম জনবহুল শহর মাশহাদে একটি মোটরসাইকেল কারখানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণের পর মুহূর্তেই আগুন লেগে যায় কারখানার পাশের টায়ার ও কার্ডবোর্ডে ভর্তি একটি বিশাল গুদামে। আগুন এতটাই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে কিছুক্ষণের মধ্যে পুরো ৪ হাজার বর্গমিটার এলাকা দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে।
মাশহাদ ফায়ার সার্ভিস বিভাগের প্রধান নিশ্চিত করেছেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য একাধিক ইউনিট মাঠে নামে এবং কয়েক ঘণ্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিভানো সম্ভব হয়। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো হতাহতের নির্দিষ্ট সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কারণও তদন্তাধীন রয়েছে।
এদিকে, মাশহাদের এই বিস্ফোরণের রেশ না কাটতেই কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে ইরানের পবিত্র শহর কোম-এ ঘটে আরেকটি বড় অগ্নিকাণ্ড। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা যায়, রাতের অন্ধকারে আকাশজুড়ে আগুনের লেলিহান শিখা এবং ধোঁয়ার কুণ্ডলী। তবে কোমের অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কোথা থেকে তা এখনো জানা যায়নি। স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল ঘিরে রেখেছে এবং তদন্ত শুরু করেছে।
আরও এক চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে কারাজ শহরে, যেখানে একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে রহস্যজনক বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে শনিবার রাতে। এই সময়কারাজ শহরেই অনুভূত হয় ৪.০ মাত্রার একটি ভূমিকম্প। যদিও এখন পর্যন্ত ভূমিকম্প ও বিস্ফোরণের মধ্যে সরাসরি কোনো সংযোগ পাওয়া যায়নি, তবে স্থানীয়রা বিস্মিত ও আতঙ্কিত।
কারাজের একটি বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “রাত ১১টার দিকে হঠাৎ করেই তীব্র শব্দে জানালার কাঁচ কেঁপে উঠল। ভেবেছিলাম ভূমিকম্প, কিন্তু পরে দেখা গেল আগুনও লেগেছে দূরে। এখন বুঝতেই পারছি না কী ঘটছে।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই একযোগে বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ইঙ্গিত দেয়, হয়তো ইরান অভ্যন্তরীণ কোনো সামরিক-শিল্প স্থাপনায় নিরাপত্তার ঘাটতির মুখে পড়েছে অথবা বিদেশি হ্যাকিং কিংবা স্যাবোটাজ-এর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি এখনই স্পষ্ট নয়, তবে তদন্তে বড় কিছু বেরিয়ে আসতে পারে।
প্রসঙ্গত, মাত্র এক সপ্তাহ আগেই—২৬ এপ্রিল—ইরানের বন্দর আব্বাস বন্দরে এক বিশাল বিস্ফোরণে অন্তত ৭০ জন নিহত ও প্রায় ১,০০০ মানুষ আহত হয়। সে সময়ও বিষয়টি ঘিরে আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনা শুরু হয়।
মাশহাদ, কোম এবং কারাজে এই ধরণের পরপর বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ড ইরানজুড়ে নিরাপত্তা এবং স্থিতিশীলতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। সরকারিভাবে এখনো সব ঘটনার বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। সাধারণ মানুষ শঙ্কিত—দেশজুড়ে এমন আতঙ্কের পরিবেশ কি আরও ভয়াবহ কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে?