তেহরান, ইরান — মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি ঘনিয়ে এসেছে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান উত্তেজনার মধ্যে তেহরানে অবস্থানরত ভারতীয় শিক্ষার্থীদের নিয়ে গভীর উদ্বেগে পড়েছে নয়াদিল্লি। যে কোনো মুহূর্তে সংঘাত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে — এমন আশঙ্কায় ইরানে অবস্থানরত শত শত ভারতীয় শিক্ষার্থীকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও তেহরানে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাস।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘ইরানে অবস্থানরত ভারতীয় নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রাখা হচ্ছে এবং তাদের স্থানীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে সচেতন থাকতে বলা হয়েছে।’
তেহরানে ভারতীয় দূতাবাসের কর্মকর্তারা জানান, ইরানের ভেতরে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ এলাকায় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে এবং এ প্রক্রিয়া এখনো চলমান। একজন কূটনীতিক জানান, ‘বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের আমরা গোষ্ঠীভিত্তিক করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দিচ্ছি। প্রয়োজনে তাদের দেশে ফেরানোর কথাও বিবেচনায় রাখা হয়েছে।’
এদিকে পুরো অঞ্চলের উত্তেজনা আরও বেড়েছে ইরানের সামরিক কর্মকর্তাদের এক বিবৃতিতে। তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ‘ইসরায়েল যদি ইরানে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে, তবে পাকিস্তান নিশ্চয়ই পারমাণবিক জবাব দেবে।’ এই মন্তব্যটি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, যেখানে পারমাণবিক যুদ্ধের আশঙ্কা এখন আর শুধুই তত্ত্বগত বিষয় নয়, বরং বাস্তবতায় রূপ নেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
২০২৪ সালের শুরুতে পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে সীমান্তে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা এবং সাময়িক উত্তেজনার পর দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক কিছুটা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছিল। তবে বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাব ফিরে এসেছে। বিশেষ করে ইসরায়েলবিরোধী অবস্থানে তাদের ঐক্য আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দৃঢ়।
মধ্যপ্রাচ্যের জিওপলিটিক্সে এমন পারমাণবিক উত্তেজনা নতুন কিছু নয়, তবে এবারের ঘটনা অনেক বেশি উদ্বেগজনক কারণ এতে পারমাণবিক শক্তিধর একাধিক দেশের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ফলে ভারতীয় শিক্ষার্থীদের সরিয়ে নেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত কেবল বিচ্ছিন্ন উদ্যোগ নয়, বরং একটি বৃহত্তর নিরাপত্তা কৌশলের অংশ বলেই মনে করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় দূতাবাস ইরানে অবস্থানরত ভারতীয়দের উদ্দেশ্যে বিশেষ বার্তা দিয়েছে: ‘কোনো গুজবে কান দেবেন না, দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে চলুন, এবং অবস্থান পরিবর্তনের ক্ষেত্রে অফিসিয়াল সহায়তা গ্রহণ করুন।’ পাশাপাশি ভারতীয় পরিবারগুলোকে অনুরোধ করা হয়েছে যেন তারা পরিস্থিতির ওপর নজর রাখেন এবং প্রয়োজনে দূতাবাসের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করেন।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের ছায়ায় পড়েছে সাধারণ নাগরিকরা — বিশেষ করে বিদেশি শিক্ষার্থীরা। নয়াদিল্লির দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ প্রমাণ করেছে, বিদেশে অবস্থানরত ভারতীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তারা কতটা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। যুদ্ধের দামামা যদি সত্যিই বেজে ওঠে, তাহলে তা কেবল এই দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং পুরো বিশ্বের জন্যই এক অশনি সংকেত হয়ে উঠবে।



















