ইরানে শহীদ রাজাই বন্দরে ভয়াবহ বিস্ফোরণ: শত শত আহত, গ্যাস ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণের আশঙ্কা!
দক্ষিণ ইরানের শহীদ রাজাই বন্দরে এক ভয়াবহ বিস্ফোরণ পরিস্থিতিকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। শনিবার, ২৬ এপ্রিল স্থানীয় সময়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, যার ফলে পুরো এলাকা কেঁপে উঠে। মুহূর্তেই সৃষ্টি হয় চরম আতঙ্ক ও বিশৃঙ্খলার।
ঘটনাস্থল থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, আশেপাশের শিল্প এলাকা এবং স্থাপনার মারাত্মক ক্ষতি হয়েছে। বিস্ফোরণের কারণে বন্দর সংলগ্ন এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ নেমে এসেছে। পশ্চিম বন্দর আব্বাসের অনেক শিল্প ইউনিট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
প্রাথমিক তদন্তে জানা যায়, একটি গ্যাস ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণের কারণেই এত বড় দুর্ঘটনা ঘটেছে। ইরানের সরকারি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজ এজেন্সির রিপোর্ট অনুযায়ী, বিস্ফোরণের ফলে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫১৬ জনের আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ইরানের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আইআরএনএ জানিয়েছে, শহীদ রাজাই বন্দরটি রাজধানী তেহরান থেকে প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। এটি ইরানের সবচেয়ে উন্নত এবং কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ কন্টেইনার বন্দরগুলোর একটি। বন্দরটি হরমুজ প্রণালীর উত্তর প্রান্তে, বন্দর আব্বাস শহর থেকে মাত্র ২৩ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থান করছে। এই প্রণালী দিয়েই বিশ্বের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ তেল সরবরাহ হয়। ফলে এই অঞ্চলে কোনো ধরনের অস্থিতিশীলতা বৈশ্বিক অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
আইআরএনএ আরও জানিয়েছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে বিস্ফোরণের পর বিশাল কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী আকাশে ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। ভয়াবহতার মাত্রা দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন এবং অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য এলাকা ত্যাগ করেন।
ঘটনার পরপরই হরমোজগান প্রদেশের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রধান নিশ্চিত করেছেন যে, জরুরি সেবাদানকারী দলগুলো দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে। আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার করে নিকটবর্তী চিকিৎসা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ত্রাণকর্মীরা নিরলসভাবে উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন এবং বিস্ফোরণের আঘাতে বিধ্বস্ত এলাকাগুলোতে সেবা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
এখনও পর্যন্ত বিস্ফোরণের সঠিক কারণ চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করা যায়নি। তবে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও তদন্তকারী দল ঘটনাস্থল ঘিরে তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাস ট্যাঙ্কারের প্রযুক্তিগত ত্রুটি অথবা নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে এই মারাত্মক বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
এদিকে ইরানের অভ্যন্তরীণ মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, পুরো ঘটনা ঘিরে একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে যাতে আর কোনো ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যায়।
বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথের কাছে এই ধরনের বিস্ফোরণ আন্তর্জাতিক মহলেও উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, যদি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে এর প্রভাব আন্তর্জাতিক জ্বালানি বাজারেও পড়তে পারে।
বর্তমানে উদ্ধার তৎপরতা ও আহতদের চিকিৎসা দেওয়ার কাজ পুরোদমে চলছে। ইরানের জনগণ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় পরিস্থিতির দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার জন্য দোয়া করছে।



















