ইয়েমেনের ক্ষেপণাস্ত্র আঘাতে স্তব্ধ ইসরায়েলের আকাশপথ, বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ ঘোষণা
মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার আগুন যেন প্রতিদিনই নতুন করে দাউদাউ করে জ্বলছে। এবার সেই উত্তাপের শিকার হলো ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর — বেন গুরিয়ন। ইয়েমেন থেকে হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্রের কারণে বিমানবন্দরটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। দেশটির সামরিক বাহিনী বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সন্দেহাতীত সন্ত্রাস নাকি আন্তর্জাতিক বার্তা?
রোববার (১৮ মে) ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন চ্যানেল ১২ একটি তাৎক্ষণিক সংবাদে জানায়, ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলের দিকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে ভূপাতিত করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। তবে ক্ষেপণাস্ত্র আক্রমণের আশঙ্কায় মধ্য ইসরায়েলের আকাশজুড়ে সাইরেন বেজে ওঠে, সৃষ্টি হয় আতঙ্কের পরিবেশ। একইসঙ্গে বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামা স্থগিত রাখার ঘোষণা আসে, যদিও এই স্থগিতাদেশ কতক্ষণ বলবৎ থাকবে, সে বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট সময় জানায়নি কর্তৃপক্ষ।
হুতি বিদ্রোহীদের স্পষ্ট বার্তা: ‘ফিলিস্তিনের জন্য যুদ্ধ’
হামলার দায় স্বীকার করে নিয়েছে ইরানসমর্থিত হুতি বিদ্রোহীরা। তারা বলছে, গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর “নির্বিচার হামলার” প্রতিক্রিয়ায় এবং ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি প্রকাশে এই ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। একাধিকবার তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে, ফিলিস্তিনে আগ্রাসন চলতে থাকলে তাদের প্রতিরোধও চলবে।
পূর্বের আক্রমণের পুনরাবৃত্তি, নিরাপত্তা ব্যবস্থায় ফাঁক?
এই প্রথম নয় — চলতি মে মাসের শুরুর দিকে হুতি বিদ্রোহীদের ছোড়া একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরের সীমানায় আঘাত হেনেছিল। সেই ঘটনায় একটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং বিমানবন্দরের গুরুত্বপূর্ণ একটি সড়কে ব্যাপক ধ্বংসের চিহ্ন পাওয়া যায়। সে সময় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছিল, এ ধরনের আক্রমণ প্রতিরোধে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু এবার আবারও সেই প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিয়ে হামলা হওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে নিরাপত্তা কাঠামো নিয়েও।
আঞ্চলিক নিরাপত্তায় ধস, আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলে প্রভাব
এই ঘটনার প্রভাব শুধু ইসরায়েলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বেন গুরিয়ন বিমানবন্দর বন্ধ হওয়ায় আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইটকে অন্য দেশে ঘুরিয়ে নিতে হয়েছে বা বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে। এতে করে তেলআবিব হয়ে যাতায়াতকারী যাত্রীদের মধ্যে চরম ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতামত: ‘এটা আর শুধুমাত্র যুদ্ধ নয়, এটা আঞ্চলিক সংকেত’
মধ্যপ্রাচ্য বিশ্লেষকরা বলছেন, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীরা এখন আর শুধু নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়ছে না। বরং, তারা একটি বড় আঞ্চলিক যুদ্ধের খেলোয়াড় হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে। ইরানের প্রত্যক্ষ মদদে তাদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তারা এখন ইসরায়েলের মতো প্রতিপক্ষকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম হয়ে উঠছে।
ইসরায়েলের বেন গুরিয়ন বিমানবন্দরে হামলার ঘটনা শুধু একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ নয়, এটি আসলে একটি স্পষ্ট বার্তা। গাজা যুদ্ধের জেরে পুরো মধ্যপ্রাচ্যে যে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়েছে, এটি তারই বহিঃপ্রকাশ। হুতি বিদ্রোহীরা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিচ্ছে এবং এই সংকট কেবল ইসরায়েল-ফিলিস্তিন নয় — এটি হয়ে উঠছে একটি আঞ্চলিক যুদ্ধের অবয়ব।